বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪–১৯৫০)। বাংলা গদ্য সাহিত্যে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। বিভূতিভূষণ ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া–মুরাতিপুর গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় মাতা মৃণালিনী দেবী। বিভূতিভূষণের পড়ালেখার পাঠ শুরু হয় পিতার কাছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ তার পিতা মারা যান। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে একই কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় ডিস্টিইংশনসহ পাস করেন। এরপর তিনি এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েও পাঠ অসমাপ্ত রেখে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হুগলির একটি মাইনর স্কুলে শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনের প্রথমেই হুগলির জাঙ্গিপাড়া মাইনর স্কুলে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি সোনারপুর হরিণাভি স্কুলেও কিছু দিন শিক্ষকতা করেন। কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক হিসেবে বাংলা, ত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। দেশে গোসম্পদ সুরক্ষা করার বিষয়ে জনমত সৃষ্টি ছিল এই প্রচারকের লক্ষ্য। তারপর তিনি পাথুরিয়াঘাটার জমিদার খেরাতচন্দ্র ঘোষের এস্টেটে সেক্রেটারি ও গৃহশিক্ষক এবং তার এস্টেটের বিহারের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারি ম্যানেজার নিযুক্ত হন। পরে কলকাতার ধর্মতলায় খেলাতচন্দ্র ক্যালকাটা ইনস্টিটিউশন মেমোরিয়াল বিদ্যায়তনে আবার শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে ১৯২৩ থেকে ১৯৪১ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন বিভূতিভূষণ। এরপর যোগ দেন গোপালনগর স্কুলে। এই স্কুলেই তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় ‘উপেক্ষিতা‘ নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার রচনা সম্ভারের মধ্যে রয়েছে ১৫টি উপন্যাস, ২০টি গল্পগ্রন্থ, ৭টি কিশোর উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী এবং দিনলিপি। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।