বিবাহ বিচ্ছেদ প্রতিরোধে সবাইকে ভাবতে হবে

তরুণ কান্তি বড়ুয়া | বৃহস্পতিবার , ৩০ মে, ২০২৪ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়টি বিশ্বের সকল রাস্ট্র গুলোতে একটি সামাজিক বিষফোড়া হয়ে বিরাজ করছে। আসলে বিবাহ হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন বা চুক্তি। যার মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে সুখকর দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ বৈবাহিক কার্যক্রম দম্পতির মাঝে সমাজ স্বীকৃত ও আইনগত ভাবে বৈধ দাম্পত্য জীবন শুরুর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদ এমন একটি অভাবনীয় প্রক্রিয়া যা মুহূর্তেই বৈবাহিক বন্ধনের বিলুপ্তি ঘটায়। দম্পতি যুগলের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা বাতিল হওয়ার নিয়মকে বিবাহ বিচ্ছেদ বোঝানো হয়ে থাকে। এটি বৈবাহিক সম্পর্ক সমাপ্তির একটি আইনগত প্রক্রিয়া। বিবাহ বিচ্ছেদ আদালত বা অন্য কোনো সংংস্থার আইনগত অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় যেখানে সম্পত্তির বন্টন, সন্তান প্রতিপালন, দাম্পত্য ভাতা, ভরনপোষণ, সন্তানদের দেখাশোনার সময় নির্ধারণ এবং ঋণের ভাগ বহনের দায়ভার জড়িত।

বৈবাহিক সম্পর্ক অকার্যকর করার এই প্রক্রিয়া সকল দেশের সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেকসময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিকভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায়। তাছাড়া স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধের অভাবহেতু পারস্পরিক ভিন্নতা, যৌন জীবনে সমস্যা, ধর্মীয় পার্থক্যের বিষয়গুলো বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমস্যাটা শিক্ষিত সমাজে বেশি লক্ষ্য করা যায়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে “ব্যক্তিত্বের সংঘাত” বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য দায়ী। ফলে বিচ্ছেদের ভয়ংকর ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে অগনিত পরিবার এবং বিচ্ছেদের কারণে মাবাবার তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সন্তানরা। পারিবারিক সমস্যা ও আর্থিক সমস্যাদি যদি উভয়ের মধ্যে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা না হয় সেক্ষেত্রেও পরিস্থিতি বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে চলে যায়। উভয়ের মধ্যে প্রতারণা, মিথ্যাচার, লুকোচুরির কোনো বিষয় পরিলক্ষিত হলে সেক্ষেত্রে দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙনের দিকে আগাতে থাকে। পরকীয়া প্রেম, মাদক সেবন কিংবা অন্য কোনো খারাপ কিছু কর্মে আসক্ত থাকা বৈবাহিক সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি করে। উভয়ের ভুলের কারণে দাম্পত্য জীবনে সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয় যার ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে। স্বামী স্ত্রীর উশৃংখল আচরণে পারিবারিক সমপ্রীতি নষ্ট হলে তা সন্তানসন্ততির জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষায় এবং দাম্পত্য জীবনে সমপ্রীতি বজায় রাখতে পিতামাতা তথা স্বামী স্ত্রীকে সংযত ও যত্নশীল হতে হবে।

সামপ্রতিক সময়ে বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে চলেছে। যদিও বিগত বছরে বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল পরিসংখ্যান মতে (বি বি এস)২০২৩ খ্রিস্টাব্দে এ হার নেমে ১.% এ দাঁড়িয়েছে যেখানে ২০২২ খ্রিস্টাব্দে ছিল ১.%। বিবিএস তথ্য মতে মফস্বল এলাকায় বিগত ২০২২ এ ১.৪ এর তুলনায় ২০২৩ এ ১.%। পক্ষান্তরে নগর এলাকায় এ হার ০.% যা বিগত ২০২২ এর ১.% হারের সামান্যতম কমে ছিল। বৈবাহিক পৃথকীকরণ হারও কিছুটা নিম্ন পর্যায়ে ছিল। ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বিচ্ছেদ হার কমে ০.২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল অর্থাৎ আগের বছরের রেকর্ড অনুযায়ী যা ০.২৯ শতাংশের একটু কম ছিল।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক নতুন জরিপ মতে ১ বছরে বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ২০২২ এ হাজারে ১.৪ শতাংশ বেড়ে যায় যা ২০২১ এ ০.৭ শতাংশ ছিল। ২০২২ এ দেশব্যাপী ১.৩ মিলিয়ন লোক এবং ৩০০,০০০ পরিবারের বেশি জনগণের মধ্যে জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে শিক্ষিত এবং চাকরিজীবী মহিলারা পরিবারে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কোনোভাবে মেনে নিতে চায় না। এটি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর ক্ষেত্রে অন্যতম মূখ্য কারণ। ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’ নামের নারী অধিকার সংগঠনের উদ্ধৃতি মতে প্রতিদিনের অনেক অভিযোগের ভিত্তিতে দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদ অনেকটা পারিবারিক অসহিষ্ণুতার ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে নারীরা বৈষম্য ও নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। অনেকের মতে এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও যথার্থ শিক্ষার অভাবহেতু হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ মতে বাংলাদেশে বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের হার উভয় ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে। অসম বয়সও অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ। মাবাবা ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে কম বয়সী মেয়েদের অধিক বয়স্ক পুরুষের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিবাহ স্থায়ী না হয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজকালকার দিনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা পুরুষের পাশাপাশি চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছে। পূর্বের তুলনায় নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি ও শিক্ষা দীক্ষায় নারীদের লক্ষ্যনীয় অগ্রগতির কারণে নারীরা আর ঘরের কোণে বন্দী থাকতে চায়না। জাতীয় কবি নজরুল তাঁর ‘নারী’ কবিতায় নারীদের মর্যাদার কথাই তো স্ব গৌরবে ফুটিয়ে তুলেছেন :- “বিশ্বে যাকিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”। বা “কোনো কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারী / প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী”।

আজকালকার দিনে নারীরা বিভিন্ন কারণে বৈবাহিক জটিলতা থেকে বেড়িয়ে আসতে চায় এবং অসুখী দাম্পত্য জীবনে থাকতে চায়না। যদিও পূর্বে তাদেরকে পরিবারের নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য করে বাধ্য হয়ে স্বামীর সাথে ঘর করতে হতো। অধিকাংশ নারীরা কর্মজীবী বিধায় তারা নিজেরা নিজেদের যত্ন নিতে সক্ষম। বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধিতে প্রভাব সৃষ্টিকারী অন্যান্য কারণগুলো হলো দারিদ্র্যতা, বেকারত্ব, সহনশীলতার অভাব, সমন্বয় সমস্যা, অতিরিক্ত বৈবাহিক সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব এবং পারস্পরিক অবিশ্বস্ততা। সমাজবিজ্ঞানী লিজা এস্ট্রোসিয়েনের মতে যেসব পরিবারে পিতামাতা আছে তাদের তুলনায় পিতৃ মাতৃহীন পরিবারের সন্তানরা অধিক উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপ এবং সমাজ পরিপন্থী আচরণের শিকার হয়। বৈবাহিক সম্পর্কের অধীনে থাকা পিতামাতার সন্তানদের তুলনায় বিবাহ বিচ্ছেদের শিকারে পরিণত সন্তানরা স্বাস্থ্যসমস্যায় ভুগে, মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে এবং পড়ালেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে থাকে। ভেঙে যাওয়া পরিবারের সন্তানরা পিতামাতার স্নেহ, ভালোবাসা এবং প্রত্যক্ষ যত্ন থেকে বঞ্চিত যা বিশ্ব মাঝে কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ হবার নয়। বিবাহ বিচ্ছেদ উল্লেখযোগ্য কিছু ঝুঁকির সাথে সম্পৃক্ত বিধায় পিতা মাতাকে আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। এ ধরনের আবেগময় সিদ্ধান্তের কারণে সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ এর শুমারী জরিপে জানা যায়, গড়ে ৪২% বিবাহিত নারীপুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদের শিকারে পরিণত হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রাজশাহীর হার সর্বোচ্চ, খুলনা এবং সিলেটের হার ২য় স্থানে এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহের হার ৩য় স্থানে। বাংলাদেশের ঢাকায় দিনে গড়ে ৩৭ জন বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার। অর্থাৎ প্রতি ৪০ মিনিটের মাথায় ১টা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। “আইন শালিস কেন্দ্র” এর উদ্ধৃতি মতে বাংলাদেশে ২০২২ খ্রিস্টাব্দে ২৯২ জন নারী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে, ৯৭ জন আত্মহত্যা করে এবং ১৭৪ জন নারী যৌতুকের শিকারে পরিণত হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে বিচ্ছেদের হার বেশি। স্বামী স্ত্রীর সামান্যতম ভুল বুঝাবুঝির মাঝে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেলে দাম্পত্য সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি করে যা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়ে যায়।

বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার লক্ষ্যে স্বামী স্ত্রীকে বিভিন্ন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদিও লিঙ্গ,বর্ণ ও ধর্মভেদে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া ভিন্নতর হয়ে থাকে। একজন মুসলিম পুরুষ তার স্ত্রীর কাছে লিখিত বা মৌখিক ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের ইচ্ছে জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যদি স্বামীস্ত্রী নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া না করেন তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হবে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশের কপিস্থানীয় চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে জমা দিতে হবে। একজন মুসলিম নারীও উপরের পদ্ধতি অনুযায়ী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কাবিননামা অনুযায়ী যদি স্ত্রীর তালাকের অনুমতি না থাকে সেক্ষেত্রে তিনি আদালতে তালাকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত তালাকের ডিক্রি জারী করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডিক্রি জারির দিন থেকে ৬ মাস অতিক্রান্ত হলে বিবাহ বাতিল বলে গন্য হবে। খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ বিবাহ আইনটি প্রযোজ্য। এই আইনের অধীনে দম্পতিরা ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ডিবোর্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতিক্রমে ডিবোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বিবাহ স্বামী স্ত্রীর মাঝে অত্যন্ত পবিত্রতম সম্পর্ক। উভয়কে পবিত্র দায়িত্ব ভেবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এ সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। বিচ্ছেদ কখনো কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। সরকারি অর্থায়ন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার নারীদের সহায়তার জন্য পরামর্শ কেন্দ্রের প্রয়োজন যাতে নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হয়ে সন্তানদের লালন পালনে সহায়তা জোগাতে পারে। শিক্ষিত নারীদের অবস্থান জাতীয় জীবনের সর্বত্রই দৃশ্যমান। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাই সমাজ জীবন, জাতীয় জীবন সুন্দর ও সুদৃঢ় ভাবে গঠন করে স্বামি স্ত্রীকে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সংসার ধর্ম পালন করে যেতে হবে কারণ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ছেলেমেয়েদের চরিত্র গঠন, যোগ্য সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ছোটখাটো ভুল ভ্রান্তিগুলোকে বিশ্বাস ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে বিবেচনা করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসার ভিত সুদৃঢ় করতে পারলে স্বামী স্ত্রীর মাঝে স্নেহ, মমতা ও প্রীতির বন্ধন গড়ে উঠবে যার ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের ভয়াল থাবা রোধ করা যাবে সুখী সুন্দর পরিবার গঠনের লক্ষ্যে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ, রাংগুনিয়া সরকারি কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদা নদীর তীরে আমাদের ছেলেবেলা
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল