বিপ্লব ঘটাতে চায় প্রগতি

নতুন প্ল্যান্টের পরিকল্পনা ।। ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত গাড়ি তৈরির একমাত্র কারখানা প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পিআইএল) মোটরযান সেক্টরে বিপ্লব ঘটাতে চায়। ৫৪ বছরের ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়ে এবার নতুন ধাঁচে গাড়ি সংযোজন এবং প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রগতি। আগামী একশ বছরের লক্ষ্য সামনে রেখে বছরে অন্তত পঞ্চাশ হাজার গাড়ি প্রস্তুতের সক্ষমতা অর্জন করতে চায় তারা। রোবট দিয়ে গাড়ির রং করানো থেকে শুরু করে ওয়েল্ডিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হচ্ছে। বিদেশি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। করোনাকালে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হলেও আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে নতুন করে কাজটি শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির ডিজাইন ও ড্রয়িং চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এরপর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
জানা যায়, ১৯৬৬ সালে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে ২৪ দশমিক ৭৫ একর ভূমিতে গান্ধারা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানাটি গড়ে তোলা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন অন্য কারখানাগুলোর সাথে গান্ধারার নাম পরিবর্তন এবং জাতীয়করণ করা হয়।
গাড়ি উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের লক্ষ্য নিয়ে ৫৪ বছর আগে কারখানাটির কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা অর্জিত হয়নি। বিদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ খোলা অবস্থায় এনে (সিকেডি) এখানে সংযোজন (সিবিইউ) করে বাজারজাত করছে। গাড়ি সংযোজনের সময় ওই গাড়ির প্রয়োজনীয় টুলসও বিদেশ থেকে আনা হয়। এর বাইরে অন্য কোনো কার্যক্রম চলেনি। বছরে হাজারখানেক গাড়ি সংযোজন হয় এখানে। প্রগতি এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার গাড়ি সংযোজন করে বাজারজাত করেছে। এর মধ্যে প্রাইভেট কার, জিপ, বাস, ট্রাক, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক্টর রয়েছে। বর্তমানে প্রগতি জাপানের মিৎসুবিসি কোম্পানির পাজেরো স্পোর্টস গাড়ি সংযোজন করছে। এর বাইরে মিৎসুবিসির ডাবল কেবিন পিকআপ সিকেডি অবস্থায় এনে সংযোজিত করে সিবিইউ অবস্থায় বিক্রির ব্যবস্থা প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন পর এবার নতুন করে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে প্রগতি। বছরে ৫০ হাজার গাড়ি সংযোজন এবং প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু করতে দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘মোটর ভেহিক্যালস অ্যাসেম্বলিং অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্লান্ট’ নামে কারখানাটিতে বছরে এক শিফটে ২৫ হাজার গাড়ি সংযোজন এবং প্রস্তুত করা সম্ভব হবে। ডাবল শিফট করা হলে গাড়ির সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০ হাজারে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষিণ আফ্রিকার অটোমেটিভ ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং (এআইএইচ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করার কিছুদিনের মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। ওই সময় কাজ অসম্পূর্ণ রেখে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীসহ পুরো টিম চলে যায়। আগামী ২৬ অক্টোবর তারা এসে পুনরায় কাজ শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে পারেনি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা রিপোর্ট দাখিল করতে পারে। প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রধান করে বুয়েট এবং চুয়েটের বিশেষজ্ঞ নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান গতকাল আজাদীকে বলেন, ৫৪ বছর ধরে প্রগতি একই ধরনের কাজ করছে। এর থেকে বেরিয়ে নিজেদের কিছু করার সময় এসেছে। সেজন্য আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, কোনো গাড়ি প্রস্তুতকারক পুরো গাড়ি নিজে প্রস্তুত করে না। ইঞ্জিনটি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তৈরি করে বাকি পার্টস কোনো না কোনো ভেন্ডর থেকে সংগ্রহ করে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ডিজাইন দিয়ে দেয়। ওই ভেন্ডর ডিজাইন অনুসরণ করে পার্টসটি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে দেয়। একটি গাড়িতে দশ হাজারের মতো পার্টস থাকে। সব পার্টস এককভাবে তৈরি করে পুরো গাড়ি প্রস্তুত করা কোনো কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। প্রগতিও তা করবে না।
তিনি আরো বলেন, এখন আমরা গাড়ি রং করতে পারি না। নতুন প্ল্যান্টে রোবট দিয়ে গাড়ি রং করাব, ওয়েল্ডিং করাব। বিদেশ থেকে শিট আমদানি করে বডি এখানেই বানাব। শুধু অ্যাসেম্বলিং নয়, গাড়ি প্রস্তুতের অনেকগুলো প্রক্রিয়া এখানে সম্পন্ন করব। এভাবে সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে বিশ্বের যেকোনো ব্র্যান্ডের কোম্পানিকে তাদের গাড়ি তৈরির প্রস্তুাব দিতে পারব। যৌথভাবেও গাড়ি উৎপাদন করতে পারব।
প্রগতির এমডি জানান, প্রগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে জিপ, পিকআপ, বাস, ট্রাকসহ সব ধরনের গাড়ি সংযোজনের ব্যবস্থা থাকবে। তবে মধ্যবিত্তের জন্য কার সংযোজনের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের পর বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হবে। দেশের মোটরযান সেক্টরে প্রগতি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭ মার্চকে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় সওজের কর্মী নিহত