চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে নগরের বিপ্লব উদ্যানে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা। তখন আপত্তি জানায় নগরবাসী। যা আমলে নেননি আ জ ম নাছির। পরবর্তীতে সাড়ে তিন বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করা রেজাউল করিম চৌধুরীর দায়িত্ব পালনকালেও দাবি ওঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার। দাবি না মেনে ওল্টো ২০২৩ সালে উদ্যানটিতে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণে চুক্তি করে চসিক। অর্থাৎ দুইজন জনপ্রতিনিধির কেউ জনদাবি আমলে নেননি।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চসিকে জনপ্রতিনিধি নেই। মেয়রের পরিবর্তে প্রশাসক পদে আছেন সরকারি কর্মকর্তা। তবে তিনি বিপ্লব উদ্যান ইস্যুতে জনগণের বক্তব্য শুনবেন। নগরবাসীর মতামতের প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নিবেন বিপ্লব উদ্যান উন্মুক্ত থাকবে কিনা। এর অংশ হিসেবে আজ সকাল ১১টায় টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘বিপ্লব উদ্যান উন্মুক্ত’ রাখার বিষয়ে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থেকে মতামত দেয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, পরিবেশবাদী ও নগরপরিকল্পনাবিদসহ সবার মতামত এবং আলোচনার প্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের পর বিপ্লব উদ্যান রক্ষায় ৬ দফা দাবিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদ’ এর ব্যানারে দুই নম্বর গেইট মোড়ে সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। এতে বিপ্লব উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে চসিকের স্থাপনা নির্মাণ ও বাণিজ্যিকীকরণের চুক্তি বাতিল করা এবং উদ্যানের হারিয়ে যাওয়া সবুজ ফিরিয়ে আনার দাবি করা হয়।
এছাড়া বিপ্লব উদ্যান থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের দাবিতে সম্প্রতি ‘বিপ্লব উদ্যান ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি’ চসিকে লিখিত আবেদন করে। এতে বিপ্লব উদ্যান নিয়ে চসিকের সাথে সৌন্দর্যবর্ধন ও বিনিয়োগের চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়।
এর আগে ১৮ আগস্ট বৈষম্যবিরোরী ছাত্র সমাজ এর পক্ষ থেকে চসিকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর লক্ষে বিপ্লব উদ্যানে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি থেকে বঙ্গবন্ধুর সকল ছবি অপসারণ এবং শহীদদের নাম উল্লেখের দাবি করা হয়।
এছাড়া ১৪ আগস্ট মানববন্ধন করে বিপ্লব উদ্যান দোকান মালিক সমিতি। এতে তারা পরিবেশ ধ্বংস করে বিপ্লব উদ্যানে নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং উদ্যানটি রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, বিপ্লব উদ্যানে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কর্পোরেশন নতুন স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই পার্ক চসিকের একার সম্পত্তি নয়, এটি জনগণেরও। এই পার্কের সুবিধা নগরবাসীও প্রাপ্য। নগরবাসীকে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে স্থাপনা গড়তে দেয়া হবে না। মূলত এসব দাবির প্রেক্ষিতেই আজকের সভাটি আহ্বান করা হয়েছে।