দেশ ও ক্রিকেট বোর্ডের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিপিএল নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা প্রবল। সামনে প্রতিকূলতাও অনেক। তবে কোনোভাবেই হাল ছাড়তে চান না ফারুক আহমেদ। বিসিবির নতুন সভাপতি জানালেন, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ২৭ ডিসেম্বর থেকেই তারা এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনে বদ্ধ পরিকর। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে যে পরিবর্তনের ঢেউ তা আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও। নাজমুল হাসানের পদত্যাগের পর বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন ফারুক আহমেদ। বিসিবির বেশির ভাগ পরিচালক আছেন আত্মগোপনে। বোর্ডের বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোও আপাতত অকার্যকর। বর্তমানে যা বাস্তবতা তাতে এই অবস্থায় বিপিএল আয়োজন করা ভীষণ কঠিন। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সোহেল ও সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক লাপাত্তা। গভর্নিং কাউন্সিলের এক সদস্য জালাল ইউনুস পদত্যাগ করেছেন পরিচালকের দায়িত্ব থেকে। কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকপক্ষ এখন যে অবস্থায় আছে, বিপিএলে দল গড়া তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। সব মিলিয়ে আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ অনেক দূর এগোনোর কথা থাকলেও সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে।
ফারুক আহমেদের বোর্ড অবশ্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে তারা, টুকটাক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিপিএলের মতো একই বাস্তবতা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগসহ প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগের অনেক ক্লাবেরও। বোর্ডের নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সদ্যসাবেক সভাপতি নাজমুল হাসানের ঘনিষ্ঠ ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ অন্যরা বিভিন্ন বিভাগে অনেক ক্লাব নিজেদের ছায়াতলে নিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ নানা সময়েই উঠেছে। সেই ক্লাবগুলিও এখন আছে অনিশ্চয়তায়। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের গত বৃহস্পতিবারের দীর্ঘ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিপিএলের প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের বাস্তবতা। যারা এখন আমাদের বোর্ডে নাই, তাদের কিন্তু দল ছিল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বা বিভিন্ন ডিভিশনে তাদের দল ছিল। ওই দলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা চেষ্টা করছি, ক্রিকেটাররা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সবাই মিলে চেষ্টা করছি নতুন ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসতে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় তাদের দল আছে কি না বা অন্য দলগুলিকে যেন তারা সহায়তা করে।
আমি আাসলে কোন দলের জন্য বলছি না। ওই দলে যে ২০–২২ জন ক্রিকেটার খেলে, তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ প্রিমিয়ার লিগে ১২টি দল, এরপর অন্যান্য লিগ, সব মিলিয়ে ৭৬টি ক্লাব খেলে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে খেলে। দলগুলির মধ্যে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যাদের ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে যে অসুবিধা হবে। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। বিপিএল নিয়েও আশার কথা শোনালেন বিসিবি সভাপতি। ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে নিজে সম্পৃক্ত থাকবেন বলেও জানালেন তিনি। বিপিএল দলগুলির সঙ্গেও কথা বলছি আমরা। বোর্ড সভার পর আমি আত্মবিশ্বাসী যে, যথাসময়ে আমরা বিপিএল শুরু করতে পারব। ২৭ ডিসেম্বর প্রথম ম্যাচ হওয়ার কথা। তার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ড্রাফট ও আর যা কিছু আছে আমরা করে ফেলার চেষ্টা করব। দু–একটি দল হয়তো দল গড়বে না। দল করবে কী করবে না, পুরোপুরি জানায়নি। তবে ধারণা করছি যে, তারা নাও গড়তে পারে। সেক্ষেত্রে দলগুলির সঙ্গে বসতে হবে। ৭টি দল ছিল। আমরা প্রথমে দলগুলি ঠিক করব। কোন ৭টি দল খেলবে। আমি বলেছি, ব্যক্তিগতভাবে সব দলের মালিকের সাক্ষাৎকার নেব। যাতে কিছু ভালো লোককে আমরা পাই।
কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি দল গড়তে চায় না, সেটি অবশ্য খোলাসা করেননি বিসিবি সভাপতি। তবে বিপিএলের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের স্বত্বাধিকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল দেশের বাইরে চলে গেছেন সরকার পতনের আগেই। ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েও সংশয় আছে প্রবল। খুলনা টাইগার্স, রংপুর রাইডার্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স এখনও নানা কিছু নিয়ে দ্বিধায় বলে জানা গেছে। একমাত্র চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নিশ্চিত করেছে অংশগ্রহণ। ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তাই সার্বিক বাস্তবতার কথাও মনে করিয়ে দিলেন ফারুক। অনেক সময় দল থাকে না বা পাওয়া যায় না। মনে হতে পারে যে এবার করে নেই, পরেরবার ভালোভাবে করার চেষ্টা করব। তবে বিপিএলটা আমরা করব। এটা চ্যালেঞ্জ এবং করব আশা করি। অন্তত ৫টি ফ্র্যাঞ্চাইজি পাওয়া গেলেও টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে বোর্ডের সূত্র থেকে।
 
        
