বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন বরিশাল

তামিম বিপিএলে প্রথমবার টুর্নামেন্ট সেরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২ মার্চ, ২০২৪ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

যে দলটিকে বলা হয়েছিল বুড়োদের দল। সে দলটিই এখন বিপিএল চ্যাম্পিয়ন। যে ক্রিকেটারটিকে আনফিট আখ্যা দিয়ে বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছিল সেই তামিম ইকবাল বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের মালিক। বুড়োদের যে তুচ্ছ করার কোনো সুযোগ নেই সেটা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা। সাথে সৌম্য, সাইফউদ্দিন, মিরাজ, তাইজুলরাতো ছিলই। সব বাধা উপড়ে ফেলে এই বুড়োদের হাত ধরে বিপিএলের প্রথম মিরোপা জিতল ফরচুন বরিশাল। বিপিএলে একাধিক নামে খেলেছে বরিশাল। কখনো বরিশাল বার্নার্স, কখনো বরিশাল বুলস। তবে এই ফ্র্যাঞ্জাইজির অধীনে গত তিন আসর খেলছে ফরচুন বরিশাল নামে। দুই বছর আগে একবার ফাইনালে গেলেও সেবার এই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ১ রানে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল বরিশালের। তবে এক মৌসুম পর যেন মধুর প্রতিশোধ নিল বরিশাল। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে তারকা খচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের স্বাদ নিতে দিলনা তামিমের বরিশাল। বিপিএলের সবচাইতে সফলতম দল কুমিল্লার সামনে নিজেদের আরো উপরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সে সুযোগকে কাজে লাগাতে দিলনা তামিমের দল। গতকাল ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোয়িান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিপিএলের শিরোপা জিতে নিল ফরচুন বরিশাল। আর এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে দেশের দুই সেরা তারকা মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহর বিপিএল শিরোপা জয়ের স্বপ্নও পূরণ হলো। এর আগে দুইবার এ দুজন ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে ফাইনালে খেললেও ট্রফি উচিয়ে ধরা হয়নি। এবার যেন সব স্বপ্ন একসাথে পূরণ করে নিল ফরচুন বরিশাল। পুরো টুর্নামেন্টে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। নিজে সর্বোচ্চ রান করেছেন। সতীর্থদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে এনেছেন। একজন যোগ্য সেনাপতি হিসেবে বরিশালকে জেতাল প্রথম বিপিএল শিরোপা। ফাইনালে ব্যাটেবলে দুর্দান্ত খেলা বরিশাল কোনো সুযোগ দেয়নি কুমিল্লাকে। বলহাতে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন মেয়ার্স, সাইফউদ্দিন, তাইজুল, ম্যাককয়রা। কুমিল্লাকে ১৫৪ রানে আটকে দিয়ে যে মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল বোলাররা সেখানে দারুণভাবে পরের কাজটা সেরে ফেলেছেন তামিমের নেতৃত্বে ব্যাটাররা। তামিমমিরাজের শুরুর পর মেয়ার্সের ঝড়ে বিপিএল শিরোপা গেল বরিশালে। ফ্র্যাঞ্জাইজিটির মালিক বলেছিলেন বিপিএল ট্রফি নিতে লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন সে লঞ্চেই বিপিএলের ট্রফি যাবে বরিশালে। তারাই যে বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স প্রথম ওভারেই হারায় ওপেনার সুনিল নারিনকে। অধিনায়ক লিটন এবং তাওহিদ হৃদয়ও পারেননি বড় জুটি গড়তে। ২৪ রানে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ফুলারের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে হৃদয় ফিরেন ১০ বলে ১৫ রান করে। নিজের পরের ওভারে আরো বড় আঘাত হানেন ফুলার। এবার তার শিকার কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন। একই কায়দায় মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লিটন ১২ বলে ১৬ রান করে। জনসন চার্লস, মঈন আলি কেউই পারেননি দলের সংকটে প্রতিরোধ গড়তে। জনসন ১৫ রান করলেও মঈন ফিরেছেন ৩ রান করে। ষষ্ঠ উইকেটে মাহিদুল ইসলাম অংকন এবং জাকের আলি মিলে যোগ করেন ৩৬ রান। ৩৫ বলে ৩৮ রান করে অংকন ফিরলে ভাঙ্গে এজুটি। তখনো কুমিল্লার রান ১২০ কিংবা ১৩০ হবে কিনা সংশয় প্রকাশ করছিলেন সবাই। ঠিক তখণই দানবীয় ব্যাটিং করেন আন্দ্রে রাসেল। বিশেষ করে ফুলারের করা ১৯ তম ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন রাসেল। আর তাতেই কুমিল্লার সংগ্রহ দেড়শ পার হয়। শেষ ওভারে দশটি বল করেছেন সাইফউদ্দিন। যেখানে তিনটি ওয়াইড এবং একটি নো বল ছিল। তবে এই ওভারে ছয় রানের বেশি নিতে পারেননি রাসেল এবং জাকির। কুমিল্লা সংগ্রহ করে ১৫৪ রান। জাকির ২৩ বলে ২০ আর রাসেল ১৪ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। বরিশালের জেমস ফুলার নিয়েছেন ২ উইকেট।

জবাব দিতে নেমে ফরচুন বরিশালের দুই ওপেনার তামিম এবং মেহেদী শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখী। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দুজন মিলে তুলে নেন ৫৯ রান। ৮ ওভারে ৭৬ রান করে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ২৬ বলে ৩টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৩৯ রান করা তামিমকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন মঈন আলি। এই ইনিংস খেলার সুবাদে ৪৯২ রান করে সবার উপরে তামিম। ওপেনিং এর সঙ্গীকে হারিয়ে মঈন আলির পরের ওভারেই ফিরেন মিরাজ। চার্লসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২৬ বলে ২৯ রান করেন মিরাজ। ৮২ রানের ভিত গড়ে দিয়ে দুই ওপেনার ফিরলেও মেয়ার্স এবং মুশফিক ভালই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে মেয়ার্স ছিলেন মারমুখি। তাকে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। তার আগে ৩০ বলে ৪৬ রানের ঝড় তুলে আসেন এই ক্যারিবীয়ান। তিন বল পর মুশফিককেও ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। মোস্তাফিজকে চার মেরে ৬ বল হাতে রেখে শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতে ফরচুন বরিশাল। আর বিপিএল পেল নতুন এক চ্যাম্পিয়নকে। যার নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের সন্তান তামিম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাকলিয়া এক্সেস রোডে হিমাগারে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধবেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড