রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বায়ুমান নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। বাইরে গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ এবং সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানায় মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে বলা হয়, ঢাকা ও তার আশপাশের জেলা শহরে বায়ুর গুণগতমান মাঝে মাঝেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হচ্ছে। এমতাবস্থায় জনসাধারণকে ঘরের বাইরে অবস্থানকালে মাস্ক পরিধান করা এবং সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে অবস্থান না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বায়ুমানের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে। জনগণকে এ তথ্য দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ইটভাটা, শিল্প–কারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে দুইবার পানি ছিটানো, পুরনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আসলে উদ্বেগজনকভাবে পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে নগরী। শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রাম নগর নয়, দেশের প্রায় সব বড় বড় শহরগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষ এবং যানবাহনের চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া এবং ধূলি ধূসরিত রাস্তাগুলো থেকে উৎসারিত ধূলি কমে গিয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও শব্দদূষণ যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও মানুষের জীবনযাত্রা এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার কারণে নতুন করে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে পরিবেশ, বায়ু এবং শব্দদূষণ।
নানা কারণে বেড়ে চলেছে নাগরিক ভোগান্তি। এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিনদিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাঁরা বলেন, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর দেশে লক্ষাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বালু কতার আদর্শ মান ২.৫ (পিএম ২.৫)। অথচ বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে। নাগরিকদের প্রতি উদাসীনতা বর্তমান রাষ্ট্রের একটা চরিত্র। তাঁরা বলেন, আমাদের দেশে বায়ু ও পরিবেশ নিয়ে প্রায় ২০০টির মতো আইন আছে। কিন্তু এগুলোর প্রয়োগ নেই। দূষণ কমানোর জন্য আদালত স্থাপন করা হয়েছে। গত ২০ বছরে বায়ু দূষণ নিয়ে যত মামলা হয়েছে, সেখানে সাজা হয়েছে মাত্র হাতেগোনা। মামলা যেগুলো হয়েছে সেগুলো বছরের পর বছর চলছে, বিচারক নেই। এ মামলাতে লোকজন ভয় পাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুদূষণ রোধের মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারা বায়ু, পানিসহ পরিবেশগত নানা দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের খুব কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখি না যার ফলেই একটি দেশ বারবার দূষণে শীর্ষে।
তাঁরা বলেন, বর্তমানে বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত জনজীবনের চিত্র গণমাধ্যম এবং পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হলেও এটা এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। প্রশাসন এবং জনগণ কেউই সচেতন নয়। বায়ুদূষণ রোধে জনসচেতনতা খুবই জরুরি। দূষণ রোধ করার জন্যে নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার। শিল্প–কারখানা থেকে যেন বায়ুদূষণ না হয় তাই পরিবেশবান্ধব শিল্প–কারখানা নির্মাণ করতে হবে। নির্বিচারে গাছকাটা বন্ধ করে বনায়ন করতে হবে। নগরের রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটাতে হবে।
বায়ুদূষণ বর্তমানে একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।