বিদ্রোহের আগুনে দগ্ধ, প্রেমের সুরে ভাসা এক অনন্ত কণ্ঠ

মাহমুদুল হাসান | রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আজকের এই দিনে, ১৮৯৯ সালে, চিরকাল অসাম্যের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ এক কবির জন্ম হয়েছিলো পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়াতে। তিনি শুধু একটি নাম নন, তিনি একটি অনুভব, একটি সত্তা। যিনি নিপীড়িতের মুখপাত্র, বঞ্চিতের ভাষ্যকার এবং প্রেমিকের নিঃশব্দ আকুলতা।

তিনি আগুনের মতো দগ্ধ করতেন অন্যায়কে। তিনি সুরের মতো গলে যেতেন ভালোবাসায়। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, ছিলেন মানবতাবাদী, ছিলেন প্রেমিক, ছিলেন সাধক। নজরুল বলেছিলেন, ‘আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভস্ম করিতে এসেছি বিশ্বকে! আমি বাণী সবারই জাগরণের, আমি চির উন্নত শির!’

তিনি যখন সাম্যবাদের কথা বলেন, তখন সমাজের বিভেদের প্রাচীর কেঁপে ওঠে। তিনি যখন প্রেমের গান লেখেন, তখন তা হয়ে ওঠে মানবতার জ্যোতির্ময় গীত। তিনি যখন কোরআনের আয়াত বা গীতার শ্লোক উচ্চারণ করেন, তখন তা হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িকতার মহাকাব্য।

নজরুল ছিলেন পূর্ব ও পশ্চিমের, হিন্দু ও মুসলমানের, প্রেম ও প্রতিবাদের মিলনস্থল। ব্রিটিশ উপনিবেশের শেকলে বন্দী জাতিকে তিনি জাগিয়েছিলেন তার কলমে ‘চল চল চল, উর্ধ গগনে বাজে মাদল।’ এই গান ছিল কেবল একটি সংগীত নয়, বরং ছিল এক জাতির অস্তিত্বের আর্তনাদ।

আজ তার জন্মদিনে আমরা স্মরণ করি শুধু একজন কবিকে নয়, স্মরণ করি আমাদের বিবেককে, আমাদের দ্রোহকে, আমাদের ভালোবাসাকে। তাঁর কণ্ঠে ছিল বজ্রের মতো গর্জন, আবার বুলবুলির মতো সুর। তিনি গেয়েছেন শ্যামাসঙ্গীত, ইসলামি সংগীত, দেশাত্মবোধক গান সবই যেন মানবতার একেকটি রূপ।

আজকের দিনে আমাদের দরকার নজরুলকে নতুন করে পাঠ করা, নতুন করে বাঁচানো। কারণ আজও বিশ্বে দুঃখ আছে, বৈষম্য আছে, যুদ্ধ আছে। আজও দরকার এমন এক কণ্ঠ যে ভালোবাসবে সব মানুষকে, যেটি কখনো ভয় পাবে না অন্যায়ের সামনে দাঁড়াতে। চিরজীবী হোন নজরুল, চিরপ্রজ্জ্বোল থাকুক তাঁর লেখা ও ভাবনা। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় বিদ্রোহের কবিকে জানাই অন্তরের গভীরতম কুর্নিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচির বিদ্রোহীর জন্মদিনে
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে