বিদেশে স্কলারশিপপ্রাপ্ত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করত তারা

নগরীর মামলায় বগুড়া থেকে একজন গ্রেপ্তারের পর ৫ দিনের রিমান্ডে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপপ্রাপ্ত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই চক্রের কাজ হচ্ছে স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার করা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় আসামির ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করেছে পুলিশ। নগরের খুলশী থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় গত বৃহস্পতিবার ওই যুবককে বগুড়া জেলার সদর উপজেলার ঠনঠনিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সিএমপির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মাহমুদা বেগম বিষয়টি জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার যুবককে আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কাউন্টার টেরোরিজম।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল জুনায়েদের (২১) বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। সে বাবামায়ের সঙ্গে বগুড়ায় বসবাস করে। বগুড়ায় সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকার উত্তরায় একটি বেসরকারি ইনস্টিটিউটে এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু এক সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বগুড়ায় চলে যায়। জুনায়েদের বিরুদ্ধে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরীর খুলশী থানায় চট্টগ্রামের একটি সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র মামলা করেন। এতে তার বিরুদ্ধে কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন, ডিজিটাল প্রতারণা, ভীতি প্রদর্শন ও হ্যাকিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

সিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার বাদী ওই শিক্ষার্থী গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কলেজে বৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পান। ১১ ফেব্রুয়ারি ‘Drake For a reason’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে পোস্ট করা হয়, যেখানে তাকে প্রতারণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরদিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ তার ভর্তি বাতিল করে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, জুনায়েদ ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য ইমেইল আইডি হ্যাক করার মাধ্যমে অথবা ল্যাপটপে বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। একইভাবে তার ছবিও হাতিয়ে নেয়। এরপর তাকে নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট করে। পরবর্তীতে জুনায়েদ ওই ফেসবুক পোস্টেই শিক্ষার্থীকে তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলে, যাতে সে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জুনায়েদ ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে আরও দুটি পোস্ট দিয়ে জানায়, তার কাছে ইংল্যান্ডআমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্নদেশে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ৩০০ থেকে ৪০০ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর তথ্য আছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সে বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে অভিযোগ দেয়ার হুমকি দেয়। এসব পোস্টে সে ‘কারও প্রতি দয়ামায়া দেখাবে না’, ‘বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে ছাড়বে’ এ ধরনের মন্তব্যও করে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সূত্র জানায়, খুলশী থানায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্তে নেমে জুনায়েদের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর শুক্রবার তাকে চট্টগ্রামে এনে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে জুনায়েদ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হেফাজতে আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্তঃসত্ত্বার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, স্বামী ও শাশুড়ি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রয়োজন আছে মনে করি না : নজরুল ইসলাম