বিদেশী জাহাজের জন্য ৩ দিনের মধ্যে ওয়েভার সনদ ইস্যু

১৫ দিন পূর্বে করতে হবে আবেদন দেশীয় পণ্যের ৫০ শতাংশ পরিবহন করবে দেশীয় জাহাজ সংকট সুরাহায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বিদেশী জাহাজের ওয়েভার নিয়ে সৃষ্ট সংকট সুরাহার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে নেয়া উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিন দিনের মধ্যেই ওয়েভার সনদ ইস্যুর কথা বলা হয়েছে। একই সাথে কোনও বিদেশী জাহাজের ক্ষেত্রে একমুখী ওয়েভার সনদ ইস্যু হওয়ার মতো ঘটনা না ঘটারও একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে বিদেশী জাহাজ মালিক এবং তাদের এদেশীয় এজেন্টদের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও শেষতক কি হবে তা দেখতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন এ্যাক্ট নামের একটি আইন প্রচলিত রয়েছে। এই আইনে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিদেশী জাহাজগুলোকে বাংলাদেশী পণ্য পরিবহন করতে বেশ কিছু নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বন্দরে বাংলাদেশী জাহাজ উপস্থিত বা আসার সিডিউল থাকলে ওই পণ্য আর বিদেশী কোনও জাহাজ লোড করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট জাহাজকে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ নেই মর্মে একটি ছাড়পত্র নিয়েই কেবল পণ্য বোঝাই করতে হয়। মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার (পিওএমএমডি) এই ছাড়পত্র ইস্যু করেন। বিদেশী জাহাজের ওয়েভার সনদ নামের এই ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খুবই সমস্যা হচ্ছিল।

বিদেশী জাহাজগুলোর স্থানীয় এজেন্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ছাড়পত্র নিয়ে চরম সমস্যা হচ্ছে। মাস কয়েক আগেও মাত্র তিনদিনের মধ্যে ছাড়পত্র পাওয়া যেতো। না পাওয়া গেলেও বিষয়টি তিনদিনের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে ১০/১২ দিন পর্যন্ত আটকে থাকছে ছাড়পত্রের আবেদন। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে একমুখী ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। সিংগাপুর থেকে পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র দেয়া হলেও ফিরতি পথের জন্য চট্টগ্রাম থেকে পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না। এতে করে কোনও জাহাজ সিংগাপুর থেকে কন্টেনার নিয়ে আসার অনুমোদন পেলেও ফিরতি পথে কন্টেনার বোঝাই করার অনুমোদন পাচ্ছে না। জাহাজটি যদি পণ্য খালাস করে খালি যেতে হয় তাহলে তাকে ডাবল ভাড়া আদায় করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি সংকট তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ। ইতোমধ্যে একটি বিদেশী ফিডার জাহাজ চট্টগ্রাম রুট থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওয়েভার সনদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় আরো কয়েকটি জাহাজের বাংলাদেশ ছাড়ার কথা বলা হচ্ছিল।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস সূত্র জানায়, দেশের প্রয়োজনীয় সব পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্য বোঝাই কন্টেনার পরিবহন করে অন্তত ৯০ টি ফিডার ভ্যাসেল। বাংলাদেশের পতাকাবাহী ফিডার ভ্যাসেল আছে মাত্র ৮টি। এই ৮টি জাহাজ দিয়ে ৯০টি জাহাজের কন্টেনার পরিবহন করা অসম্ভব। এই অবস্থায় বিদেশী ফিডারগুলো এখান থেকে সরে যেতে শুরু করলে পুরো আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যই মুখ থুবড়ে পড়বে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওয়েভার সনদ ইস্যুকারী সংস্থা বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের আয়োজন করে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সংস্থার মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ নিজামুল হকের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন ২০১৯ এর আলোকে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও), শিপিং এজেন্ট এসাসিয়েশন, ফিডার ভ্যাসেল অপারেটর, বাংলাদেশ ওশন গোয়িং শিপস্‌ ওনার এসোসিয়েশন, এইচ আর লাইনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় দেশের প্রচলিত বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন ২০১৯ ও প্রণীত বিধিবিধানের উপর বিস্তারিত আলোচনা শেষে পণ্যের দ্রুত পরিবহন এবং পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রেখে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইনের যথপোযুক্ত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, দেশীয় পণ্যের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ পরিবহন করবে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টসমূহ নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে পণ্য বোঝাইয়ের জন্য ওয়েভার সনদের আবেদন করবে।

শিপিং এজেন্টের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ওসান গোয়িং শিপস্‌ ওনার এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বরাবর বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের প্রাপ্ত্যতা নিশ্চিত করণের জন্য অনুরোধ করবে। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ৩ দিন বা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মতামত প্রদান করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা প্রদানে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ নেই মর্মে ওয়েভার সনদ জারি করবে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বন্দরে ও তারিখে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে অথবা নির্দিষ্ট বন্দরে ও তারিখের মধ্যে পণ্য বোঝাই করতে ব্যর্থ হলে দায়ী পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে বিধি মোতাবেক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ বন্দরে আগমনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অথবা সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় বিধিবিধান অনুযায়ী পণ্য বোঝাইয়ের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের ধারণ ক্ষমতা বা অবশিষ্ট ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য বোঝাইয়ে অগ্রাধিকার পাবে।

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তিন দিনের মধ্যে ওয়েভার সনদ প্রদানের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি কার্যকর হলে বহু সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঠিক কতটুকু কার্যকর হবে সেটি দেখার জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে ঘরে আগুন প্রাণ গেল বৃদ্ধার