বিদেশিদের বঙ্গবন্ধু টানেল দেখালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ট্রেনে করে গেলেন কক্সবাজার ।। আছেন ২৪ দেশের ৩৪ জন কূটনৈতিক ।। উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তুলে ধরতেই এই আউটরিচ প্রোগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ২৪টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনীতিককে নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পরিদর্শন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে টানেল পরিদর্শনের পর বিদেশি অতিথিদের নিয়ে ট্রেনে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পথে রওনা হন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বাসেডর আউটরিচ প্রোগ্রামের আওতায় কূটনীতিকদের নিয়ে সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন হাছান মাহমুদ। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল পরিদর্শন করেন তারা। দুপুরে ট্রেনে করে কক্সবাজার যাওয়ার মুহূর্তে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যেন আমাদের দেশকে জানেন, দেশে যে বিরাট উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হচ্ছে সেগুলো যেন তারা স্বচক্ষে দেখেন, সেই কারণেই তাদেরকে চট্টগ্রামে আনা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে তারা কক্সবাজার যাবেন।

তিনি বলেন, কূটনীতিকদের এই পরিদর্শনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সামর্থ্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে তাতে আমাদের দেশকে তারা ভালোভাবে জানতে পারছেন। বাংলাদেশকে জানার মাধ্যমে তারা তাদের দেশকে এই বার্তা পৌঁছে দেবেন এবং বাংলাদেশের এই খবরগুলো তারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবেন।

এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ট্রেনলাইন হয়েছিল ১৯৩০ সালে। কিন্তু তার অনেক আগেই চট্টগ্রাম থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ট্রেন লাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। অর্থাৎ ১৯০০ সালের পরপরই সেটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু দেশ বিভাগ হলো, দেশ বিভাগের পর বাংলাদেশ হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তিনিও বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কারণ তাকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে পুনর্গঠন করার আগেই তাকে হত্যা করা হয়।

হাছান মাহমুদ বলেন, এই জনপদের মানুষ যে স্বপ্ন ১২৫ বছর আগে দেখেছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে। এটি একটি অসাধারণ কাজ। তাই আজকে আমরা কূটনীতিকদেরকে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও চট্টগ্রাম থেকে প্রথম ট্রেনে করে কক্সবাজার যাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে আনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা যেন বাংলাদেশকে জানেন এবং চিনেন। আমাদের দেশে যে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, এই সমুদ্র সৈকতের খবরটা যেন তাদের মাধ্যমে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও উন্নয়ন সম্পর্কে তারা যেন ভালো করে জানতে পারেন, সেজন্যই তাদেরকে আমরা নিয়ে এসেছি।

বিদেশি প্রতিনিধিদের সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হবে কিনাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের সাথে তো কথাবার্তা আমাদের সবসময়ই হয়। তারা অনেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন। এখনো যদি তারা সুযোগ পান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন।

প্রতিনিধিদের এই পরিদর্শনের মাধ্যমে তাদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে কিনাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই তারা বাংলাদেশকে আরো ভালোভাবে জানতে পারবেন। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার সফরে এসেছেন তারা। আজ চট্টগ্রামে কয়েক ঘণ্টা কাটালেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রোড টানেল তারা দেখলেন। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নদীর তলদেশ দিয়ে রোড টানেল নেই। সেটি তারা দেখলেন। এপার থেকে ওপারে গিয়ে আবার ফিরে আসলেন। এই যে অসাধারণ উন্নয়ন, যেগুলো আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে মানুষ কল্পনাও করেনি, সেগুলো আজকে বাস্তব। সেই বাস্তবতা আজকে কূটনীতিকরা নিজের চোখে দেখেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, ইতালি, ডেনমার্ক, কসোভো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান, ভুটান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মিশর, ফ্রান্স এবং এফএও, আইইউটি, একেডিএন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ২৪ জন মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনৈতিক সদস্য আউটরিচ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের তিনজনসহ নারী আসনে নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধজঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মাদক ও দুর্নীতি দমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখুন