বিদায় বেলায় আসছে আরও নতুন বই

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সারা বছরই বই বের করে প্রকাশনা সংস্থাগুলো। এতে গতি আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। কারণ এ মাসে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আয়োজন করা হয় বইমেলা। নতুন বইয়ের সঙ্গে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম এ বইমেলা। তাই লেখকরাও তৃপ্ত হন এ মাসে তাদের বই বেরুলে। আবার পাঠকও মুখিয়ে থাকে বইমেলার জন্য। এতে বাণিজ্যিক স্বার্থ থাকায় প্রকাশকও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন বইমেলা শেষ হওয়ার আগেই নতুন বইগুলো বের করতে। এ চেষ্টার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবারও নগরের সিআরবি শিরীষতলায় চলমান বইমেলায় নতুন বই এনেছেন প্রকাশকরা। অথচ আজসহ মেলা চলবে আর মাত্র তিনদিন।

প্রকাশকরা জানিয়েছেন, অতীতে বইমেলার শেষ দিনেও নতুন বই আসার অনেক নজির আছে। এবারও আসতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম বইমেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার স্টলে থাকা বিক্রয়কর্মীর সাথে আলাপকালে গতকাল মেলায় আসা অন্তত ১২টি নতুন বইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। গত কয়েক দিনে এ সংখ্যা ৫০টি ছাড়িয়ে গেছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন বইয়ের পাশাপাশি অনেকগুলো বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ এসেছে গত কয়েকদিনে। ঢাকার অনেগুলো প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মী জানান, কিছু কিছু লেখকের যে পরিমাণ বই তারা প্রথমদিকে এনেছেন তা শেষ হয়ে গেছে। পাঠক চাহিদা থাকায় ওসব বই নতুন করে আনা হচ্ছে। একই কথা বলেন চট্টগ্রামের অনেক প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মীরাও।

গতকাল সন্ধ্যায় প্রথমা স্টলে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে কুরিয়ারে করে আসা নতুন বইয়ের প্যাকেট খুলছেন বিক্রয়কর্মীরা। তারা জানান, আনিসুল হকের উপন্যাস ‘কখনো আমার মাকে’ এসেছে। এটি ছিল বইটির অষ্টম মুদ্রণ। গতকাল মেলায় আসা নতুন বই দেখা গেছে কথাপ্রকাশ স্টলে। এর মধ্যে আছেআফসান চৌধুরীর উপন্যাস ‘রক্তের মেহেন্দি দাগ’, বেগম আকতার কামালের ‘কবির উপন্যাস’ ও মুহিত হাসানের সংকলিত গ্রন্থ ‘শিবরাম রঙ্গ’। এছাড়া পূর্বের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে গতকাল আনা হয়েছে হারুন রশীদের অনুবাদ গ্রন্থ ‘থাংলিয়ানা’।

১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয় থমাস হারবার্ট লুইনের স্মৃতিকথা ‘আ ফ্লাই অন দ্য হুইল’। যেখানে আছে লেখকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরল সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ‘এর প্রেক্ষাপট পাবর্ত্য চট্টগ্রামের কয়েক হাজার বর্গমাইলের গভীর জঙ্গলাবৃত অঞ্চল। সেখানে বাস করে ‘তাউংথা’ নামে পরিচিত কিছু আদিম জনজাতি। হাজার বছর ধরে সমভূমির মানুষের কাছে ওরা অসভ্য, হিংস্র, বর্বর বলে গণ্য। তার ওপর কারো কারো ধারণা, ওই ভূখণ্ডে সমতলের মানুষের প্রবেশে মানা। ফলে লোকমুখে ছড়ায় নানা উদ্ভট গুজব। ওখানকার অধিবাসীরা নাকি জলের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলে, বাকি পৃথিবীর কোনো খবরও ওখানে আসে না! উনিশ শতকে নিজের প্রাণ বাজি রেখে সেই ‘নিষিদ্ধ’ দুর্গম এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন ব্রিটিশ অফিসার থমাস হারবার্ট লুইন। দুঃসাহসী সেই অভিযানে উন্মোচন হতে থাকে একের পর এক বিস্ময়। গোরা লুইন পাহাড়িদের সঙ্গে আলাপ করেন, ঘনিষ্ঠও হন; সরেজমিনে দেখেন তাদের জীবনযাত্রা। লুসাই জনগোষ্ঠীর লোকেরা ভালোবেসে তাঁর নাম দেয় ‘থাংলিয়ানা’। হারবার্ট লুইনের সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশিত ‘আ ফ্লাই অন দ্য হুইল’ গ্রন্থের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত অধ্যায়গুলোর বাংলা অনুবাদ নিয়েই ‘থাংলিয়ানা’।

গতকাল রাদিয়া প্রকাশন থেকে বের হয়েছে এলিজাবেথ আরিফা মুবাশ্‌শিরার স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন’ (তৃতীয় খণ্ড) ও ‘সুদূরের পথে’। এর মধ্যে ‘সুদূরের পথে’ গ্রন্থে লেখকের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ‘কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন’ গ্রন্থ সম্পর্কে এলিজাবেথ আরিফা মুবাশ্‌শিরা বলেন, আমরা জানি জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বন্ধুর পথে চলতে গিয়ে কখনো হৃদয় বিষণ্ন হয়েছে, কখনো সমস্যায় পড়ে বিপর্যস্ত হয়েছিতখন অনেকের সহৃদয়তা ও সহমর্মিতায় আমার পথচলা সহজ হয়েছে। তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে আমি ‘কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন’ তৃতীয় খণ্ড লেখার আগ্রহ অনুভব করেছি।

গতকাল চন্দ্রবিন্দুতে এসেছে ড. সন্দীপক মল্লিকের প্রবন্ধের বই ‘অলঙ্কৃত অভিজ্ঞান ও অন্যান্য’ এবং ‘প্রান্তজন, সত্তাসমুদ্ধার ও অন্যান্য’। এর মধ্যে ‘অলঙ্কৃত অভিজ্ঞান ও অন্যান্য প্রবন্ধগ্রন্থে প্রাণমগ্নতার দীপান্বিত রূপঅবয়ব সন্দীপ্ত হয়েছে। বিষয়বিন্যাস ও অনুভবঐশ্বর্য সমান্তরাল বাক্যায়নে প্রগাঢ় করেছে মানবিক প্রগতিপ্রেরণার দিশাকে’।

এছাড়া গতকাল মেলায় আসা নতুন বইয়ের মধ্যে আছে অনন্যা প্রকাশন থেকে বের হওয়া হৃদয় হাসান বাবুর উপন্যাস ‘তুমি তো সেই’, স্বাধীন প্রকাশন থেকে বের হওয়া শারুদ নিজামের ‘নিঃশব্দ চোখে’ এবং প্রজ্ঞালোক প্রকাশনী থেকে বের হওয়া এস এম এ কে জাহাঙ্গীরের ‘বৃহত্তর পটিয়া কৃতি ও কীর্তমান’।

এছাড়া আগেরদিন মঙ্গলবার মেলায় এসেছে আফছার উদ্দিন লিটনের কাব্যগ্রন্থ ‘অধরা স্বপ্ন’। এর ফ্ল্যাপে লেখা আছেআফছার উদ্দিন লিটনের কবিতা সহজসরল ও অনাড়ম্বর। এই স্বত:স্ফূর্ত পঙক্তিগুলোর মধ্যরয়েছে প্রাণের ছোঁয়া’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে এমেলিয়া প্রকাশনের স্টলে।

এদিকে বইমেলা উপলক্ষে বের হয়েছে ভ্রমণ ও বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল ‘জিওগ্রাফিকা’। এর সম্পাদক কমল দাশ। বাতিঘর ও অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে জার্নালটি। পাঠকের প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘জিওগ্রাফিকা’।

এছাড়া এবার মেলায় আসা নতুন বইগুলোর মধ্যে আছে মাইছুরা ইশফাতের প্রথম বই ‘বোহেমিয়ান মন’ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে বলে প্রকাশনা সংস্থা শৈলীর বিক্রয়কর্মীরা। ‘মাইছুরা ইশফাতের লেখার বিষয়ভাবনায় যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি আঙ্গিকবিন্যাসে আছে নতুনত্বের ছাপ। শব্দ ব্যবহারে, উপমায়এমনকি ধ্বনিঅনুরণনেও তার কবিতার পঙক্তিগুলো ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। তার বোহেমিয়ান মন শুধু কবিতায় নয়, জীবনের পরতে পরতে ঘুরে বেড়ায়’।

বাতিঘর থেকে প্রকাশিত জ্যোর্তিময় নন্দীর অনুবাদ গ্রন্থ ‘কালো শালোয়ার ও অন্যান্য গল্প’ও আছে পাঠকের পছন্দের তালিকায়। গল্পগুলো উর্দু কথাসহিত্যিক সাদাত হাসান মান্টো’র। মান্টোর একডজন গল্পের অনুবাদ সংকলিত হয়েছে ‘কালো শালোয়ার ও অন্যান্য গল্প’এ। তবে অনুবাদে মান্টোর রচনাশৈলীর বা বাঁকভঙ্গিও যথসাধ্য অবিকল রাখার চেষ্টা করেছেন অনুবাদক জ্যোর্তিময় নন্দী।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় শৈলী প্রকাশনের স্টলে ছড়ার কাগজ ‘ছড়াশৈলী’র মোড়ক উন্মোচন করেন কবি রাশেদ রউফ। এসময় সম্পাদক কাসেম আলী রানাসহ কবিসাহিত্যিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রীতি উৎসব :

গতকাল বইমেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রীতি উৎসব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। মূখ্য আলোচক ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য ও সংস্কৃতি কর্মী বৃজেট ডায়েস। বিশেষ অতিথি ছিলেন কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বর্তমান সরকারের আমলে আর্থসামাজিকতা তো বটেই বিশ্ব রাজনীতিতেও বাংলাদেশ নিজের দৃঢ় অবস্থানটি তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে ভারত সবসময় ছিল, আছে এবং থাকবে। এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিকসামাজিকসাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের যে বন্ধন রয়েছে তা আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। প্রতিটি উৎসব আমাদেরকে আনন্দ দেয়, অনুপ্রেরণা যোগায়। পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিকভাবে উন্নত মানুষে পরিণত করে। জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে উৎসবের শিক্ষাকে হৃদয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। ভারতবাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও প্রাচীন। দুই দেশের সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন। এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। বাংলাদেশে চট্টগ্রামর সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্থায়ীভাবে ফুটপাত দখল মুক্ত না হলে লাগাতার কর্মসূচি
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক ও ফুটপাত দখল করায় ২১ ব্যবসায়ীকে লাখ টাকা জরিমানা