আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন। খবর বাসসের।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় রাত আটটার দিকে সভা শুরু হয়। সভা শেষে যমুনার সামনে রাত ১১টার দিকে ব্রিফিং করে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদের লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস–সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।’ এর পাশাপাশি, ‘আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।’
বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ জানায় : উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবর আসা মাত্র শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেকেই স্লোগান দেন, ‘এ মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগ খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রথমে বৃহস্পতিবার রাতভর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এবং পরদিন থেকে শাহবাগে টানা দুই দিন অবরোধের মধ্যে এদিন উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়, যা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন একদল বিক্ষোভকারী। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে তাতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। পরে তারা সেদিন বিকাল থেকেই টানা অবস্থান করছেন শাহবাগে। শনিবার বিকালে সেখানে জনজমায়েত থেকে আবারও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
আ.লীগকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে নিষিদ্ধ চায় জুলাই ঐক্য, রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা
বাংলানিউজ জানায় : আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের আগে রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা আসার পর এ ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়ে একটি মিনি ট্রাকে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে বিক্ষোভকারীদের রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, আমাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা অফিশিয়ালি ঘোষণা দেওয়ার আগে কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। ঢাকাবাসী আপনারা রাজপথে নেমে আসুন। এ সময় জুলাই ঐক্যের মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু কার্যক্রম নিষিদ্ধের মুলা ঝুলিয়ে আমাদের থামানো যাবে না। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অফিশিয়ালি আমাদের মতামত না জানাচ্ছি, কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। আমরা হাসনাতসহ আলোচনায় বসব। অফিশিয়াল ঘোষণা আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।
গণহত্যাকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে: উপদেষ্টা আসিফ
গণহত্যাকারীরা সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে– আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এমনটি বলেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গতকাল রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমনটি বলেন। উপদেষ্টা আসিফ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হওয়াই অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং তা করার জন্য ছাত্র–জনতার দাবি অনুযায়ী আইসিটি আইনে যাবতীয় সংশোধন করা হয়েছে। তিনি আরও লেখেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ হওয়ার পর গণহত্যাকারীরা সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
যা বললেন নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিলের দাবিও তুলেছেন তিনি। সিদ্ধান্তটি জানার পর পরই শনিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দিয়ে এ দাবি করেন এনসিপির আহ্বায়ক।
নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘বিপ্লবী ছাত্র–জনতাকে অভিনন্দন। সরকারকেও সাধুবাদ। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চাই। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র ও বিচার প্রশ্নে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। সারা দেশের ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে।’