মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান – দেশবরেণ্য ও স্বনামধন্য ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। পেশাগত জীবনে অসামান্য হাবিবুর রহমান দেশ পরিচালনার পাশাপাশি মননশীল লেখক, অনুবাদক, বিশ্লেষক, সাহিত্যিক ও কবি হিসেবেও বিশিষ্ট ছিলেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার দয়ারামপুর গ্রামে। দেশবিভাগের পর সপরিবারে তাঁর বাবা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস বাংলাদেশে চলে আসেন এবং রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরবর্তীসময়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। হাবিবুর রহমানের কর্মজীবনের শুরু ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে যোগ দিয়ে। এসময় তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন কিছুকাল। ১৯৬৪ সালে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশায় হাবিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে অধিষ্ঠিত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধান বিচারপতি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবেও তাঁর অবদান বিশেষভাবে স্মরণ্য। অনুবাদ সহ সত্তরটিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন হাবিবুর রহমান। রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল অনুরাগ। অনুবাদ করেছেন পবিত্র কোরআন শরিফের। জাতির সংকটকালে সবসময় তিনি সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন, ছিলেন সাধারণের পাশে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় চালিত ছিলেন আজীবন। হয়ে উঠেছিলেন জাতির বিবেক। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি প্রয়াত হন মননের আলোকবর্তিকা বিচারপতি হাবিবুর রহমান।