বিখ্যাত পেঙ্গুইন লালা

সাফ্‌ফাত আহম্মদ খান | বুধবার , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

মানুষের সাথে পোষা প্রাণীর বন্ধুত্বের অনেক গল্প জানা আছে কিন্তু মানুষের সাথে পেঙ্গুইনের বন্ধুত্ব তাও কি সম্ভব? হ্যাঁ, সেই গল্পই আজ আমি তোমাদের শোনাবো। তবে তার আগে পেঙ্গুইন সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

পেঙ্গুইনকে আমরা কোট পরা ভদ্রলোক হিসাবে ডেকে থাকি। সামনের দিকে সাদা ও পেছন দিকে কালো রঙের এই প্রাণীটি যখন গুটি গুটি পায়ে চলাফেরা করে তখন দূর থেকে দেখতে অনেকটা কোট পরা কোনো ভদ্রলোকের মতো দেখায়। শীত প্রধান দেশ বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোর বরফের দেশে এদের বসবাস। পেঙ্গুইন উড়তে না পারলেও তাদেরকে পাখি হিসাবেই ডাকা হয়। এর প্রিয় খাবার হলো মাছ। পৃথিবীতে প্রায় ১৮ প্রজাতির পেঙ্গুইন আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি হচ্ছে এম্পেরর বা সম্‌্রাট পেঙ্গুইন। পেঙ্গুইন বছরে একবার ডিম দিলেও কোনো কোনো প্রজাতি বছরে দুইবারও ডিম দেয়। ডিমটি দুই পায়ের মাঝে রেখে বিশেষ কৌশলে ঢেকে রাখে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটলে বাবামা উভয়ে তার যত্ন নেয়। পেঙ্গুইনরা দলবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে। একটি পেঙ্গুইন ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। পেঙ্গুইন নিয়ে তো মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া গেল। এবার লালা’র গল্পটি বলি। ১৯৮৬ সালে জাপানের এক জেলের জালে একবার একটি অসুস্থ পেঙ্গুইন আটকা পড়েছিলো। পেঙ্গুইনটি চোখে এবং ডানায় আঘাত পেয়েছিলো। জেলেটি এই অসুস্থ পেঙ্গুইনটিকে সাথে রাখতেও পারছিলেন না আবার ফেলেও দিতে পারছিলেন না। তাই কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি তার বন্ধু মিশিমাতোকে পেঙ্গুইনটি দিয়ে দেন। মিশিমাতো থাকতেন জাপানের শিবুশিতে। মিশিমাতো পেঙ্গুইনটির নাম দিয়েছিলেন লালা। মিশিমাতোর পরিবারের পরম যত্নে লালা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে। মিশিমাতো লালাকে সাগরে ফেরৎ পাঠাতে চাইলেও লালা ফেরৎ যায়নি। লালা মিশিমাতোর পরিবারের সাথেই নিজের সন্তানের মতো থেকে যায়। মিশিমাতো লালা’র জন্য তার থাকার উপযোগী ঘরের কোণায় ছোট্ট একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ব্যবস্থা করেছিলেন কারণ পেঙ্গুইন বরফের দেশের প্রাণী। গরমে সেটি কোনোভাবেই থাকতে পারবে না। লালা ওই এলাকার মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

লালা ঘুরতে খুব পছন্দ করত। সে নিজে নিজে বাজারে গিয়ে তার জন্য মাছ সংগ্রহ করতো। প্রতিদিন সকালে তার পিঠে একটি ব্যাগ বেঁধে দেওয়া হতো আর সে স্কুলছাত্রের মতো গুটি গুটি পায়ে বাজারে যেতো মাছ কিনতে। বাজারের সবাই তাকে চিনতো। তারা তাকে মাছ খাওয়াতো এবং তার ব্যাগে ভরে খাওয়ার জন্য মাছও দিয়ে দিতো। শুধু তাই নয় বাজার যাওয়ার পথে গরম লাগলে লোকজন তাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতো। মোট কথা লালা একদম মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলো। ঘটনাটি অনেক পুরানো হলেও তখনকার দিনে আজকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এত বিস্তৃতি না থাকায় লালা সম্পর্কে মানুষ এতটা জানতে পারেনি।

১৯৯৬ সালে আমেরিকার রিয়েল টিভিতে লালাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। সেখানে তুলে ধরা হয় লালা’র প্রতিদিনের জীবনযাপনের চিত্র। লালা ১৯৯৮ সালে মারা যায় কিন্তু মারা গিয়েও সে তার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে রইলো। লালা’র প্রতি ভালোবাসা স্বরূপ লালা যে পথ ধরে প্রতিদিন বাজারে যাওয়াআসা করতো সেই রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে লালা চান রোড। তোমরা যদি লালাকে দেখতে চাও তাহলে ইউটিউবে লালা দ্য পেঙ্গুইন লিখে সার্চ করলে তাকে নিয়ে তৈরি ভিডিওটা পেয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভুত বলে কিছু নেই
পরবর্তী নিবন্ধসিটি গেইটে ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক দুই