বিক্রির জন্য রাখা শতাধিক কড়ি কাইট্টা উদ্ধার

| শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের দুটি অ্যাকুরিয়াম ফিশ ও পাখি বিক্রির দোকান থেকে ১৩৮টি দেশীয় কড়ি কাইট্টা জাতের কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার স্টেশন রোডের বিসমিল্লাহ ফিশ অ্যান্ড বার্ডস সেন্টার থেকে ১১০টি এবং রেশমা অ্যাকুয়ারিয়াম অ্যান্ড বার্ডস সেন্টার থেকে ২৮টি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে দোকান ফেলে মালিককর্মচারীরা পালিয়ে যায়। তাই কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বলছে, কড়ি কাইট্টা জাতের কচ্ছপ সংকটাপন্ন প্রজাতির। এগুলো অ্যাকুরিয়াম স্পিসিসও নয়। শুধুই বিক্রির জন্য নাকি পাচারের জন্য কচ্ছপগুলো আনা হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, এই কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ বা ইনডিয়ান রুফড টার্টল (Pangshura tecta) সংকটাপন্ন প্রজাতির এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর তফিসল১ ভুক্ত। খবর বিডিনিউজের।

আমাদের অভিযানের বিষয়ে টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। দুই দোকানের মালিকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অবৈধভাবে এই কচ্ছপ সংগ্রহ ও রাখার দায়ে ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, এগুলো প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ কচ্ছপই একই সাইজের। এই কচ্ছপ অ্যাকুরিয়াম স্পিসিস না। কিন্তু এগুলো রাখা হয়েছে অ্যাকুরিয়াম ফিশের দোকানে। কয়েকটি কচ্ছপের পিঠে লাল রঙ করা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, হয়ত ক্রেতাদের মিসগাইড করতে এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে লাল রঙ করা হয়েছে। শতাধিক কচ্ছপ শুধুই কি অ্যাকুরিয়াম স্পেসিস হিসেবে বিক্রির জন্য নাকি পাচারের জন্য আনা হয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

Indian roofed turtle বা কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ পিঠের খোলসের জন্য পরিচিত। দেখে মনে হয়, এর পিঠের ওপর আলাদা একটি ছাদ আছে। বাদামি খোলসের কিনারার দিক হলদেটে কমলা রঙের। খোলসের মাঝের অংশ কমলা বা লালচে কালো ডোরা রয়েছে। এ কচ্ছপের মাথার সামনের অংশ কালো। আর দুই পাশে হলদেটেলাল দাগ থাকে। রঙের বিন্যাসের কারণে কালোহলুদ ‘ভি’ হরফের এর মত দেখায়। কড়ি কাইট্টার চোয়াল হলুদ। আর গলার অংশ হলুদকালো ডোরাকাটা। পায়েও কালোর উপর হলুদ ফুটকি থাকে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মূলতবাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে এই প্রজাতির কচ্ছপের দেখা মেলে। জলে ও স্থলে কড়ি কাইট্টার বাস। নদী, খালে, পাহাড়ে জলাভূমির কাছাকাছি এবং নদীখালের তীরে এরা থাকে। জলজ গাছপালা, আগাছা, ছোট কাঁকড়া ও শামুক এবং লতাপাতা খেয়ে এরা বাঁচে। দীপান্বিতা ভট্টাচার্য জানান, এক সময় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে কড়ি কাইট্টা বেশি দেখা যেত। কিন্তু এখন তেমন দেখা যায় না। এরা একাধারে পানিতে থাকে না। মাটি ও পানিতে মিলিয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএনের লাল তালিকায় এ কচ্ছপকে ভালনারেবল বা সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ প্রজাতি প্রকৃতিতে বিপন্ন হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পোষা প্রাণি হিসেবে বিক্রির জন্য, মাংস খাওয়া এবং ভেষজ ওষুধ তৈরিতে বেশি সংখ্যায় সংগ্রহের কারণেই এই্‌ প্রজাতি ঝুঁকিতে পড়েছে। উদ্ধার হওয়া কড়ি কাইট্টাগুলো আপাতত চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি তিন গ্রাম পুলিশের
পরবর্তী নিবন্ধসম্পর্ক প্রাণবন্তই থাকবে, বলছে দিল্লি