বিকডার নতুন মাশুল মানছে না বিজিএমইএ

১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর রপ্তানি কার্যক্রমে সংকট তৈরির আশংকা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের তোড়জোড় নিয়ে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প অনেকটা দিশেহারা। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে নানা সংকটে জর্জরিত থাকার কথা উল্লেখ করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং চার্জ না বাড়াতে বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) বরাবরে অনুরোধপত্র দেয়। কিন্তু বিকডা অনুরোধপত্র প্রত্যাখান করে রপ্তানি পণ্যের হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। বিজিএমইএ’র পত্রের প্রেক্ষিতে বিকডা জানিয়েছে, টিকে থাকার স্বার্থেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিকডা চার্জ বৃদ্ধি কার্যকর করার জন্য ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুইপক্ষের বিরোধ ক্রমে তুঙ্গে ওঠার পাশাপাশি রপ্তানি কার্যক্রমে সংকট তৈরিরও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি ২১টি আইসিডিতে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের ক্ষেত্রে স্টাফিংয়ে ৬০ শতাংশ এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে ৩০ শতাংশ দর বৃদ্ধি করে নতুন চার্জ নির্ধারণ করেছে বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা। ইতোমধ্যে বিকডা বিষয়টি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছে।

বিকডার ওই চিঠির প্রেক্ষিতে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এক চিঠিতে বিকডার চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি সংকটসহ নানাবিধ কারণে তৈরি পোশাক শিল্প কঠিন সময় পার করছে। এই পরিস্থিতিতে রপ্তানির গতি ধরে রাখতে চার্জ বৃদ্ধি অনুচিত।’ বিজিএমইএ দাবি করে, অফডক চার্জ বৃদ্ধি ৮০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত এবং দুটি ক্ষেত্রে নতুন চার্জ আরোপ করা হয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। চিঠিতে বলা হয়, এই ধরনের চার্জ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে পূর্ব আলোচনা না করে চার্জ বৃদ্ধি করা বিধিসম্মত নয়। চিঠিতে পূর্বের ন্যায় চার্জ আদায় অব্যাহত রাখারও অনুরোধ করা হয়।

বিজিএমইএর এই চিঠির প্রেক্ষিতে বিকডার সভাপতি খলিলুর রহমান গতকাল পাঠানো এক চিঠিতে জানান, ‘আইসিডিসমূহ বিগত কয়েক বছরে ব্যাংকের উচ্চ সুদ, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, শ্রমিক ব্যয় ও যন্ত্রপাতির মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম আর্থিক চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় পূর্বের চার্জে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।’

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের ৯৩ শতাংশ রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডল করছে বেসরকারি আইসিডিসমূহ। প্রতিটি আইসিডিতে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার অধিকাংশই ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল। অথচ মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাসের কারণে পূর্বের ৮,২৫০ টাকা স্টাফিং চার্জ বর্তমানে ৬৬ ডলার সমপরিমাণ, যেখানে আগে তা ছিল প্রায় ৯৮ ডলার। অর্থাৎ, আয় কমে গেছে প্রায় ৪০২৬ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে।

বিকডার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, নতুন মাশুল মূলত শিপিং লাইন বা তাদের মনোনীত ফরোয়ার্ডারদের নিকট থেকে আদায় করা হবে, রপ্তানিকারক সরাসরি এই চার্জ বহন করে না। চিঠিতে আরো বলা হয়, করোনার পর বিশ্ববাজারে কন্টেনার ভাড়া ২০ গুণ বেড়েছিল, তবুও বিদেশি ক্রেতাগণ বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনেছেন। অথচ আইসিডির মাশুল সামগ্রিক লজিস্টিকস ব্যয়ের মাত্র ৩.০৬ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিকডা এবং বিজিএমইএ’র বিরোধ মেটাতে সরকারকে আগেভাগে কাজ শুরু করা উচিত। অন্যথায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়তি চার্জ কার্যকর করা নিয়ে নতুন সংকটের সৃষ্টি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক মন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা