বিএসসির বহরে যুক্ত হবে আরো ২৪ নতুন জাহাজ

পণ্য পরিবহন খাতের পাঁচশ কোটি ডলার বাণিজ্যের অংশীদার হতে চায় সংস্থাটি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন খাতের প্রায় পাঁচশ’ কোটি ডলারের বিশাল বাজারের অংশীদার হওয়ার লক্ষ্যে আরো ২৪টি নতুন জাহাজ ক্রয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। দীর্ঘদিন ধরে ধুকে ধুকে চলা বিএসসির বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ায় ক্ষতি সামলে প্রতিষ্ঠানটির লাভের অংক এখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এই ধারা ধরে রাখতেই নতুন জাহাজ কেনার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ বিশ্বের নানা দেশ থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে। আমদানিকৃত পণ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ পরিবাহিত হয় সমুদ্র পথে। এই খাতে বাংলাদেশের শুধু পরিবহন খাতে ব্যয় হয় অন্তত পাঁচশ’ কোটি ডলার। বছর জুড়ে চলা বিশাল এই বাজারের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ বাংলাদেশ পেয়ে থাকে। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ না থাকার ফলে নিজেদের পণ্য বাইরের জাহাজ দিয়ে পরিবহন করতে হয়। প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা জাহাজ ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয়। দেশ থেকে এসব টাকা বিদেশি জাহাজ কোম্পানির পকেটে চলে যায়। অথচ নিজেদের জাহাজ থাকলে এই টাকার একটি বড় অংশ দেশে রাখার সুযোগ তৈরি হতো।
বিএসসির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল জানান, দেশীয় জাহাজ না থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। বিএসসির বহরে জাহাজ না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় দেশীয় জাহাজে পণ্য পরিবহন সম্ভব হয় না। অথচ দেশীয় জাহাজে পণ্য পরিবহন করা হলে এই টাকা দেশেই থাকতো। বিএসসির বহরে একসময় ৩৮টি জাহাজ ছিল। রমরমা অবস্থা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার। কিন্তু নানামুখী অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনায় বিএসসি দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। জাহাজ বিক্রি করে সংস্থার কর্মকর্তা এবং নাবিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে হয়েছিল। কোন জাহাজ নেই, অথচ বসিয়ে বসিয়ে বেতন ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছিল। সংস্থার আশি শতাংশেরও বেশি সক্ষমতা অকেজো থাকায় প্রায় ডুবতে বসেছিল বিএসসি। মাত্র দুইটি অয়েল ট্যাংকার দিয়ে বহির্নোঙর থেকে জ্বালানি তেল লাইটারিং করে বিএসসি ধুকছিল।
ভয়াবহ সেই দুর্দিন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য চীনের সহায়তায় বিএসসি ছয়টি জাহাজ ক্রয় করে। ছয়টি জাহাজের তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং তিনটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার। নতুন ছয়টি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ায় সংস্থার ভাগ্য ঘুরতে শুরু করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএসসি নিট মুনাফা করেছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিএসসির মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা বা ১৩৬ শতাংশ।
মুনাফার এই ধারা ধরে রাখার জন্য আরো ২৪টি নতুন জাহাজ ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২টি ক্যামিকেল পরিবহনে সক্ষম অয়েল ট্যাংকার (প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ডিডব্লিউটি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন), দুইটি ১ লাখ টন থেকে এক লাখ পঁচিশ হাজার টন ডিডব্লিউটি সম্পন্ন মাদার অয়েল ট্যাংকার। দশ থেকে পণের হাজার টন ধারণক্ষমতার ১০টি বাল্ক ক্যারিয়ার, ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টিইইউএস ধারণক্ষমতা সম্পন্ন চারটি কন্টেনার ভ্যাসেল, প্রতিটি ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল পরিবহন উপযোগী মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার দুইটি, প্রতিটি ৮০ হাজার টন কয়লা পরিবহনে সক্ষম দুইটি বাল্ক ক্যারিয়ার, প্রতিটি ১ লাখ ৪০ সিবিএম ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি এলএনজি ক্যারিয়ার ক্রয় করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সুমন মাহমুদ সাব্বির বলেন, ছয়টি নতুন জাহাজ কেনায় নিট মুনাফা ভালো হয়েছে। আরো কয়েকটি নতুন জাহাজ কেনা সম্ভব হলে সংস্থার মুনাফার পরিমান আরো বাড়বে। বিএসসির মতো রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থার বহরে কমপক্ষে ৪০টি জাহাজ থাকা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউখিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা খুন
পরবর্তী নিবন্ধসবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বাদ মাশরাফি