নিজেদের বহরে যোগ করার জন্য চীনে নির্মাণাধীন দুটি জাহাজ দেখে এসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেছেন, দেশের সবচেয়ে আধুনিক জাহাজ হিসেবে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার চলতি বছর বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে। জাহাজ দুটি চালু হওয়ার পর বছরে অন্তত ১৫০ কোটি টাকা বিএসসি মুনাফা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে বিএসসি ১৪ জাহাজের একটি সমৃদ্ধ বহর গড়ে তুলবে বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিএসসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে চীন থেকে দুটি জাহাজ কিনছে। এ দুটি জাহাজের প্রত্যেকটি ৫৫–৬০ হাজার টন পণ্য বহন করতে সক্ষম।
নির্মাণাধীন জাহাজ দুটি সরেজমিনে পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুটি জাহাজের একটির ৮৫–৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ কিংবা অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে জাহাজটি আমাদের সরবরাহ করা হবে। অপর জাহাজটির নির্মাণকাজ প্রায় ৪৫–৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটিও নভেম্বর মাসের শেষের দিকে অথবা ডিসেম্বর মাসের শুরুতে আমাদের কাছে সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। জাহাজ দুটি চীনের নেন ইয়াং শিপইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে। তবে এগুলো আমেরিকান কোম্পানি হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি আমাদের সবরাহ দিচ্ছে। তারাই এই জাহাজ কেনার আন্তর্জাতিক টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। ৯৩৬ কোটি টাকায় (৭৬ দশমিক ৬৯৮ মিলিয়ন ডলার) জাহাজ দুটি কেনা হচ্ছে। আমেরিকান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করায় জাহাজ দুটিকে ভবিষ্যতে বিশ্বের কোনো বন্দরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ১০৫টি জাহাজ রয়েছে উল্লেখ করে বিএসসির এমডি জানান, আমরা যে দুটি জাহাজ কিনে আনছি সেগুলোর মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী কোনো জাহাজ দেশে নেই। তিনি বলেন, এ ধরনের ওজনের এবং সাইজের একটি জাহাজ দৈনিক গড়ে ২৪ মেট্রিক টন জ্বালানি পোড়ায়। কিন্তু আমাদের ক্রয় করা জাহাজ দুটি পোড়াবে দৈনিক ২০ মেট্রিক টনের মতো জ্বালানি। প্রতিদিন ৪ মেট্রিক টন জ্বালানি সাশ্রয় হবে।
কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, বিএসসির বহরে বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। এ বছর নতুন দুটি যুক্ত হচ্ছে। আরো তিনটি কেনার জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এ তিনটির জন্য সরকারের তরফ থেকে বিদেশি ঋণে অর্থায়ন করা হবে। পাশাপাশি জিটুজি পদ্ধতিতে চীন থেকে আরো চারটি জাহাজ কেনা হচ্ছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সবগুলো জাহাজ মিলে ১৪টি জাহাজের বহর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বিএসসি কাজ করছে। বর্তমানে বিএসসির ৫টি জাহাজে কোনো বিদেশি ক্রু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও বিএসসির জাহাজগুলো বাংলাদেশের নাবিকেরা পরিচালনা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফ, সচিব আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাজিয়া পারভীন, মহাব্যবস্থাপক (দূরপ্রাচ্য ও পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন) মোহাম্মদ আতাউর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (বীমা ও দাবি) মোহাম্মদ আহসান–উল–করিম, মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মোহাম্মদ আলমগীরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।