দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি নিয়ে আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, তিনি আইন অনুযায়ীই চলবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি বলেন, বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। উনারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলব।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবারো বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। দাবি মানা না হলে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছেন। এ বিষয়ে বক্তৃতা করেন দলটির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ও মো. হারুনুর রশীদ। এই আলোচনা চলাকালে অধিবেশন কক্ষে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
জিএম সিরাজ তার দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মানবিক দিক বিবেচনায় দুয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। তা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করারও হুমকি দেন। বিএনপির এই সাংসদ বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়ত সম্ভব হবে না। আমরা ছয়জন এই সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এ সংসদের জন্য অলংকার। আজকে তাই বলতে চাই- প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যিকার অর্থে অলংকার হয়ে থাকি, তাহলে এ সংসদ অলংকারবিহীন করবেন না। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত এমনও হতে পারে, ম্যাডাম যদি চরম অবস্থায় চলে যান, তাহলে আমাদের এই সংসদে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না। এ সময় তার মাইক বন্ধ হয়ে যায়।
জিএম সিরাজ বলেন, গত এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক।
জিএম সিরাজ বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার নজির দেশে আছে। ১৯৭৯ সালে আসম আব্দুর রব সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিম দুদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সুযোগ পান। খালেদা জিয়া কেন সেই সুযোগ পাবেন না- সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, এটা তার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই করতে পারবেন, করেন। সর্বময় ক্ষমতার মালিক তিনি। এটা পাবলিক পারসেপশন। প্রধানমন্ত্রীকে সিরাজ অনুরোধ করেন- মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে দুয়েক দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশ পাঠানো হোক। না হলে কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার সারাজীবন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি এটা নিয়ে পুনরায় কথা বলতে চাই না। আইন যা বলেছে সেই মতে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। ওনারা যদি দেখাতে পারেন। তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু ওনারা দেখাতে পারবেন না। আর বিবেচনার প্রশ্নও আসে না।