বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক অফিসার হত্যাকাণ্ড, বিগত বছরগুলোতে অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যায় যারা করেছে, তারা শাস্তি পাবে। গতকাল গণভবনে জিয়াউর রহমানের সময়ে নিহত সামরিক সদস্যদের পরিবার, বিগত বিএনপি–জামায়াতের আন্দোলনে অগ্নিদগ্ধ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। অগ্নিসন্ত্রাস ও জিয়ার আমলে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমিও আপনাদের মতো একজন। আমিও একদিন শুনলাম আমার কেউ নেই। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম, এতিম হয়ে গেলাম। কী বর্বরভাবে আমার বাবা–মা, ভাই সবাইকে হারালাম। খবর বাংলানিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনী ও আর্মি কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে (তারা)। আমি আমার গ্রামেও একজনকে খুঁজে পেয়েছিলাম, তার ছেলেমেয়েদের আমি দেখতাম। এরপর আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম এসব নামধাম জোগাড় করতে। শুরুতে পাওয়া কষ্টকর ছিল। পরে নামগুলো পাই।
শেখ হাসিনা বলেন, কী বর্বরতা ১৯৭৫ সালের পর। প্রথমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আমার ভাই, আত্মীয়–স্বজনকে মারল। এরপর জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করল। এরপর থেকে বার বার সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করল। শুধু তাই নয়, আমাদের আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা করল। যখন আমি অপজিশনে ছিলাম এমন দিন নেই যেদিন লাশ টানতে হয়নি। আমাদের এত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, তারপরও কী করে এদের পাশে লোক থাকে?
বিগত সময়ে বিএনপি–জামায়াতের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস–জীবন্ত মানুষকে কীভাবে পোড়ানো যায়? সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার। এখন দেখুন কয়েকদিন ধরে মার্কেটে আগুন। হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে আগুন, তারপর আমার মনে সন্দেহ হলো এটিও নাশকতা কিনা। ঈদে মানুষ ব্যবসা–বাণিজ্য করবে, সেই পথটাই বন্ধ করে দিতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্যায় যারা করেছে তারা কিন্তু শাস্তি পাবে। শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে, পাবে। আরও যারা বাকি আছে সেটা (বিচার) আমরা অবশ্যই করব। এরা যে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। দিনের পর দিন ফাঁসির ঘটনা, আমরা বিদেশে থেকেও এই খবরগুলো শুনতাম। কোনো অপরাধ নেই, ধরে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দেওয়া। জিয়াউর রহমান তো হাসতে হাসতে মানুষের ফাঁসির রায় লিখত। কোনো বিচার ছিল না।
দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার একটাই চেষ্টা, এদেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে যখন মানুষ ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে, সেই সময় আবার অগ্নিসন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করা। এটি যারা করে, এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আল্লাহ সহ্য করবে না। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সমালোচনা করে বলেন, এরা দেশের ভালো চায় না।
অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি–জামায়াতের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে দুটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
নতুন ভবন তৈরির আগে ২০ বার ভাবুন : বিডিনিউজ জানায়, সরকারি ভবন নির্মাণের আগে তার প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল একনেক সভায় তিনি এমন নির্দেশনা দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ২০ বার চিন্তা করবেন।
এদিন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণের একটি প্রকল্প একনেক বেঠকে উঠেছিল। সেটি অনুমোদন না করেই ফেরত পাঠানো হয়। ওই প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী নতুন ভবনের প্রয়োজন খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন।
কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত : দেশের সব কারাগার থেকে যেন ভার্চুয়াল আদালতে যুক্ত হওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সংস্কার এবং নির্মাণের একটা প্রস্তাব একনেক বৈঠকে এলে তা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান জানান।
সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় গুরুত্বারোপ : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, আসুন আমরা এমডিবির মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করে একটি সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে একত্রে কাজ করি। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়ন সহয়োগিতা : দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক ইসিওএসওসি (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) প্যানেল আলোচনায় পূর্বে ধারণকৃত তার ভিডিও মূল বক্তব্যে এ কথা বলেন।