সরকার চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় ‘হতাশ ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছে বিএনপি।
আজ রবিবার (৯ মে) রাতে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে দলীয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের খবর নিয়ে আসার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিডিনিউজ
তিনি একই সঙ্গে বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে তার মনে হয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তাধীনে মুক্ত থাকার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে তার ভাই আবেদন জানালেও আজ রবিবারই তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
ফখরুল বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এই কথা অত্যন্ত সত্য কথা যে একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যটা ছিল বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এটা আজকে নয়, ১/১১ থেকে শুরু হয়েছে। এটা তো খুব পরিষ্কার যে এই সরকার ১/১১ এর ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায়। তারই ফলশ্রুতিতে আজকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
খালেদার আবেদন নাকচের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, “খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একবার যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ৪০১ ধারায় কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। সেজন্য এটাকে আরেকবার রিওপেন করার সুযোগ নেই।”
ফখরুল বলেন, “যে ধারাতে দেশনেত্রীর সাজা স্থগিত করেছে, ঐ ধারাতেই কিন্তু তাকে বিদেশে যাওয়া বা একেবারেই সাজা-দণ্ড মওকুফ করার যথেষ্ট পরিমাণ সুযোগ সেই আইনের মধ্যে দেওয়া আছে। তারা (সরকার) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন, মাফ করে দিতে পারেন কিন্তু একজন পপ্যুলার পলিটিক্যাল লিডার এবং এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও গণতন্ত্রের যুদ্ধের সঙ্গে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তার জন্য তাদের কোনো মানবতা কাজ করে না।”
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো যুক্তি নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রতিহিংসামূলক রাজনীতিকে চরিতার্থ করতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
খালেদা জিয়া কি তবে ‘রাজনীতির শিকার’ হলেন শেষ পর্যন্ত-এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “অবশ্যই। শেষ পর্যন্ত বলছেন কেন? তিনি তো রাজনীতির শিকার হয়েই কারাগারে আছেন এবং এখন অন্তরীণই আছেন বলা যেতে পারে।”
এখন বিএনপির পদক্ষেপ কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা তো পার্টির তরফ থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তখনও আবেদন করিনি, এখনও আবেদন করিনি। তার পরিবার যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন। পরিবারই ডিসাইড করবে, তারা কী করবে?”
তিন বছর বন্দি থাকার পর গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। তারপর থেকে তিনি তার বাড়িতেই ছিলেন। এক বছর বাদে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর গত ৬ মে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বোনকে বিদেশে নিতে অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন।
আজ রবিবার বিকালে সরকারের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং দলের চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের নিয়ে কথা বলেন। পরে তিনি হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে আসেন।
খালেদা জিয়ার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমি আজকে তাকে দূর থেকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার কাছে বেটার মনে হলো। আল্লাহর কাছে অশেষ রহমত যে, এখন উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, তার কিছু কিছু প্যারামিটার বেটার এবং তিনি এখন অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন এবং সেখানে তার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না।”
তবে শঙ্কা এখনও রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু এখনও তার যে লাংগ ও পেটে পানি আসছিল, সেটার জন্য কিন্তু টিউব লাগানো আছে। ডাক্তাররা বলেছেন, পোস্ট কোভিড যে কমপ্লিকেশন, সেই কমপ্লিকেশনগুলো তার পুরো মাত্রায়ই আছে।”
উল্লেখ্য, হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা চলছে।