চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্বের কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ দলের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত না করায় নির্বাচনী প্রস্তুতির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা শুরু না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ত্রয়োদশ জাতীয় সংবাদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। অঘোষিত ৬৩টি আসনের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম– ১৫ (লোহাগাড়া–সাতকানিয়া আংশিক) আসন। যার ফলে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। বন্ধ রয়েছে দলীয় সকল কার্যক্রমসহ নির্বাচনী প্রস্তুতি।
দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, এই আসনে বিএনপির একটি দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় হতাশা ক্রমশঃ বাড়ছে। প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব দলের সংগঠন ও নির্বাচনী প্রস্তুতিকে প্রভাবিত করছে এবং তৃণমূল কর্মীদের মনোবল কমছে। এর ফলে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও তারা আশাবাদী প্রার্থী ঘোষণার পর দল সক্রিয় হয়ে মাঠে শক্তিশালী উপস্থিতি দেখাতে সক্ষম হবে।
চট্টগ্রাম– ১৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন যথাক্রমে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান মুজিব, সদস্য অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ও সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফৌজুল কবির ফজলু বলেন, এটি বিএনপির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। যেখানে ধানের শীষের জনপ্রিয়তা সবসময়ই প্রমাণিত। অতীতে জোটের কারণে আসন ছাড়তে হলেও এবার সেই সুযোগ নেই। এই আসন আর বর্গা দিতে চাই না, এবার নিজেদের প্রার্থীই চাই। বারবার আসন ছাড়লে সংগঠনে হতাশা ও দলে নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হবে। তাই বিলম্ব হলেও ধানের শীষের প্রতীকে ত্যাগী ও নির্যাতিত একজন দলীয় নেতাই মনোনয়ন পাবেন এমনটি আশা করেন তিনি।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, দলের একজন কর্মী হয়ে কঠিন সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন–সংগ্রামসহ এই আসনে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছি। ভবিষ্যতেও দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে যাব। যার কারণে তিনি নিজেকে এই আসনের একজন হকদার হিসেবে দাবি করেন। এছাড়া দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ যাচাই–বাচাই করে যোগ্য ব্যক্তিকে এই আসনে মনোনয়ন দিবেন। তাই একটু বিলম্ব হলেও সমস্যা হওয়ার কথা না। আমরা দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষ হয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করে যাব।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপির সাথে আমার সম্পৃক্ততা। কলেজ জীবনেই ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হই। পরে থানা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছি। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন–সংগ্রামে জনগণ ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় মাঠে ছিলাম। ২০১৭ সালে ফ্যাসিস্ট সরকার আমাকে গুম পর্যন্ত করেছিল। আগামীতেও দলের যেকোনো দুঃসময়ে পরিস্থিতি মেনে নিয়েই পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। দল আমার অতীত ভূমিকা ও ত্যাগ–তিতিক্ষা বিবেচনায় আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১৫ আসনে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, আমি গত ৩৬ বছর যাবত ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। দলের জন্য আন্দোলন–সংগ্রামে সবসময় এগিয়ে ছিলাম। যার কারণে সবচেয়ে বেশি মামলার আসামিও হয়েছি। দলের স্বার্থ রক্ষার্থে কোনো দিন পিছ পা হইনি, আর হবোও না। এসব বিবেচনায় দল তাকেই এই আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিবে বলে মনে করেন তিনি। আরো বলেন, প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। কে দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন, তার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী জামাল হোসাইন বলেন, দলের দুঃসময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আন্দোলন–সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। ফলে মামলা–হামলার শিকার হতে হয়েছে। যার কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, শত নির্যাতনের মাঝেও এলাকা ছাড়িনি। তৃণমূলকে ছেড়ে কোথাও যাইনি। এখন দেখি অনেকেই প্রার্থী হতে চায়। দলের নীতি নির্ধারক যাচাই–বাচাই করে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিবেন। তাই এই আসনে মনোনয়ন দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এতে নেতাকর্মীদের হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। আশা করছি দল শীঘ্রই এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাঠের বাস্তবতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেই দল প্রার্থী নির্ধারণ করছে। এ প্রক্রিয়ায় সামান্য বিলম্ব হলেও নেতাকর্মীদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। খুব শীঘ্রই এই আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সুসংগঠিত করা হয়েছে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে আমরা সর্বাত্মকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। এই আসনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।










