বাস ভাড়া উঠানামা ১০ টাকা

মর্জি মাফিক দাবি সিএনজি চালকের জিম্মিদশা যাত্রীদের

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ১০ মিনিট পেরিয়েছে। এখনো আসেনি কাঙ্ক্ষিত যান টেম্পো। তাই পরিবহনের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষগুলোর চোখেমুখে ছিল বিরক্তির ছাপ। এর মধ্যে কয়েকজনকে দেখা গেল রিকশা নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সবুজ রঙের একটি টেম্পো (টুকটুকি নামেও পরিচিত) এসে দাঁড়ায়। এবার যাত্রীরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়, কার আগে কে উঠবেন। মুহূর্তেই পূর্ণ হয়ে গেল সবগুলো আসন। কিন্তু চালক টেম্পো ছাড়ে না। কাছে যেতেই শুনা গেল চালকের চিৎকার। বলছেন, উঠানামা ১০, আন্দরকিল্লাহ ১৫। পাল্টা চিৎকার করে প্রতিবাদ করছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, অস্বাভাবিক ভাড়া দিব না। এক পর্যায়ে চালক বললেন, তাহলে নেমে যান। এবার যাত্রীদের কেউ কেউ বললেন, ঠিক আছে চলেন।

গতকাল সকালে এ দৃশ্য দেখা গেছে নগরের বহদ্দারহাট পুলিশ বঙের সামনে। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া টেম্পোগুলো কাপাসগোলা, চকবাজার তেলিপট্টি মোড় ও আন্দরকিল্লাহ হয়ে শাহ আমানত মার্কেট সংলগ্ন আমতল পর্যন্ত যায়। অবশ্য টেম্পোগুলো আসে রাস্তার মাথা থেকে।

বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা এবং চালকযাত্রীর বাকবিতণ্ডার নেপথ্যে ছিল গ্যাস সংকট। চালকদের কেউ বলছেন, গাড়িতে গ্যাস নিতে গিয়ে তাদের দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টারও বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এতে গাড়ি চালানোর সময় কম পাওয়ায় তাদের আয়ও কম হয়েছে। অনেকে বলছেন, আগেরদিন গ্যাস না থাকায় রাস্তায় গাড়ি বের করতে পারেননি। সেদিন আয়হীন কেটেছে তাদের। তাই কম আয় হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছেন। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়েনি। আবার গ্যাস সংকটের জন্য তারা দায়ী নন। তাহলে কেন তারা বাড়তি ভাড়া গুনবেন?

জানা গেছে, মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালে ত্রুটি দেখা দেয়ায় গত শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রামের ৬৮টি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নির্ভর বিভিন্ন পরিবহন চালকরা তাদের গাড়িতে গ্যাস নিতে পারেনি। এর প্রভাবে রাস্তায় গণপরিবহন কমে যায়। এ সুযোগে যেসব পরিবহনে আগে থেকে গ্যাস মজুদ ছিল সেগুলোর চালকরা যাত্রীদের ‘জিম্মি’ করে আদায় করে মর্জিমাফিক ভাড়া। অবশ্য শুক্রবার রাত ১০টার পর গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে পারেননি যাত্রীরা। এবার চালকদের যুক্তি, গ্যাস নিতে গিয়ে তাদের দীর্ঘসময় নষ্ট হয়েছে। তাই ভাড়া একটু বাড়তি নিচ্ছেন।

নগরের বিভিন্ন সড়কের যাত্রীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সিএনজি চালিত গাড়িগুলো দিনভর বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। মো. সেলিম নামে এক যাত্রী আজাদীকে বলেন, বহাদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লাহ পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া নেয় ৮ টাকা। সেখানে আজ গুনতে হল ১৫ টাকা। একই রুটের যাত্রী শফি বলেন, প্যারেড কর্নার থেকে আন্দরকিল্লাহ পর্যন্ত ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা নিয়েছে।

রায়হান নামে এক যাত্রী বলেন, বহাদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লাহ যাওয়ার জন্য টেম্পোতে উঠি। কিন্তু তেলিপট্টি মোড় এসে গ্যাস নাই বলে ১০ টাকা ভাড়া নিয়ে আমাদের নামিয়ে দেয়। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর দেখি একই টেম্পো সেখান থেকে ঘুরিয়ে আবারও বহাদ্দারহাটের যাত্রী নিয়ে চলে যায়। রীতিমত যাত্রীকে জিম্মি করে ফেলেছে টেম্পো চালকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য সড়কেও একই অবস্থা। প্রতিটি সড়কেই সিএনজি চালিত গাড়িগুলো বাড়তি ভাড়া নিয়েছে। ১০ টাকার নিচে গন্তব্যে যেতে পারেনি গাড়িগুলোর যাত্রীরা।

মদুনাঘাট থেকে রাস্তার মাথা পর্যন্ত লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। গতকাল নেয়া হয়েছে ৩০ টাকা। চকবাজার থেকে জামালখান, কাজীর দেউরি, ইস্পাহানি, টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত চলাচলকারী টেম্পো এবং অন্যান্য যানেও বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়েছে গতকাল। চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত ৫ টাকার ভাড়া নেয়া হয়েছে ১০ টাকা।

রেজা মুজাম্মেল নামে এক যাত্রী আজাদীকে বলেন, কোতোয়ালী থেকে মুরাদপুর ৩ নং বাসের ভাড়া দ্বিগুণ নেয়া হয়েছে। এ রুটের মিনিবাস উঠানামা ভাড়া নিয়েছে ১০ টাকা। কোতোয়ালী থেকে চকবাজার পর্যন্ত টমটম ১০ টাকার ভাড়া নিয়েছে ২০ টাকা। রায়হান নামে এক যাত্রী আজাদীকে বলেন, পটিয়া শান্তিরহাট থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত মিনিবাসের ভাড়া ১৫ টাকা। গ্যাস নেই অজুহাতে আজ দাবি করেছে ২০ টাকা। বাধ্য হয়ে দিলাম।

বাড়তি ভাড়া বিষয়ে জানতে চাইলে কবির হোসেন নামে এক বাস চালক আজাদীকে বলেন, বেশি নিতে আমাদেরও ইচ্ছে করে না। কিন্তু কী করব। গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে একদিন গাড়িই চালাতে পারেনি। কেউ তো আমাদের এক টাকাও সাহায্য করেনি। আমাদেরও তো বউবাচ্চা আছে। ‘তাই বলে বাড়তি নিবেন, এটা কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি তো একা নিচ্ছি না। সবাই নিচ্ছে।

এদিকে গতকাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা ছিল সকালের দিকে। গণপরিবহনের সংখ্যাও কম। ফলে যেগুলো রাস্তায় ছিল সেখানে যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় ছিল। বাসমিনিবাসে আসন সংখ্যার বাইরে প্রচুর লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যান।

গণপরিবহনের বাইরে সিএনজি অটোরিকশা চালকরাও গতকাল গলাকাটা ভাড়া নিয়েছে যাত্রীদের কাছ থেকে। মনগড়া ভাড়া দাবি করায় সিএনজি চালকদের সঙ্গেও বাকবিতণ্ডা হয়েছে যাত্রীদের। চেরাগী পাহাড় থেকে মুহাম্মদপুর মাজার রোড পর্যন্ত ৮০ টাকার সিএনজি ভাড়া দাবি করা হয়েছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া অন্যান্য সড়কে ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করার অভিযোগ রয়েছে সিএনজি চালকদের বিরুদ্ধে। এছাড়া গণপরিবহন সংকটের সুযোগ নেয় রিকশা চালকরাও। ১৫ টাকার ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা দাবি করে তারা। ৫০ টাকার ভাড়া দাবি করে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএপ্রিলের মাঝামাঝি কালুরঘাট সেতু দিয়ে চলবে গাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধগ্যাস এসেছে, তবে সব জায়গায় নয়