বাসাবাড়ি দোকানে পানি সড়কে জলজট

ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা যানবাহন, বিপাকে কর্মজীবীরা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ জুন, ২০২২ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ছিল চট্টগ্রামে। আর এই বৃষ্টি মানেই চরম ভোগান্তি বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে যায় সড়ক, দোকান, বাসা-বাড়ি। জলজটের কারণে প্রধান সড়কগুলো কয়েক ঘণ্টা পানির নিচে ডুবে থাকায় যানবাহন ও অফিসমুখী যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। বৃষ্টিতে অনেক সড়কে পানি জমে যায়। ফলে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে দীর্ঘ সময় যাত্রীবাহী পরিবহন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যানজট বেড়েছে কয়েক গুণ।
এমনিতেই নগরীতে যানবাহন ও মানুষের চাপ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরজীবনে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নিচু এলাকায় বসবাসরত এবং অফিসগামী লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অফিসগামীরা হেঁটে ও রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই আবার হাঁটুপানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে যান। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন কর্মজীবী নারীরা। পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে শত শত যানবাহন।
গত শুক্রবার ভোর থেকে নগরী এবং আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কখনো হালকা, কখনো আবার টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বিকেল থেকে কয়েক দফা ভারী বৃষ্টির কারণে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। এরপর কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়, যা গতকাল সকাল থেকেও থেমে থেমে অব্যাহত ছিল। এর ফলে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, শনিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
নগরীর নতুন ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রধান সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানচলাচলে ধীরগতি নেমে আসে। নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এতে আটকা পড়েন বিমানবন্দরের যাত্রী, রোগীসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। অঙিজেন থেকে মুরাদপুরমুখী সড়কে যান চলাচল থেমে থেমে চললেও বহদ্দারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বেশ কয়েকটি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বাদুরতলা, এক কিলোমিটার, বাকলিয়া, কেবি আমান আলি রোড, বহদ্দারহাট, মাইজপাড়া, টেঙটাইল, বিজয়নগর, কাপাসগোলা, হালিশহর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে শনিবার সকালে একটি সীমানা দেয়াল ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা দেয়ালের ভাঙ্গা অংশ সরিয়ে নেয়।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা জামশেদুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই মুরাদপুরসহ আশপাশের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। চলাচল করা যায় না। ঘরের মধ্যে পানি ওঠায় আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে শুনছি, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। চারটি প্রকল্প চলমান। কিন্তু এসব প্রকল্পের কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নালা-খালগুলো পরিষ্কার করা হয় না। জলাবদ্ধতার এ দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাব? কবে এ সমস্যা সমাধান হবে জানি না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলমান। প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে। সেসব বাঁধের কারণে খালগুলো পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলজটের সৃষ্টি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসি পাস করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ!
পরবর্তী নিবন্ধরাস্তায় পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট যুবকের মৃত্যু