বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্ত্রী এক মাসের শিশুকে নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বামী

চমেক হাসপাতাল নিউরোলজি ওয়ার্ড

জাহেদুল কবির | শুক্রবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

সন্তান প্রসবের পর থেকে স্নায়ু রোগে ভুগছিলেন চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহানারা বেগম। সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় গত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। কিন্তু ওয়ার্ডের ভিতরে বেড খালি না থাকায় ভর্তির পর সিঁড়ির পাশে বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন জাহানারা। স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ডান পা নাড়াতে পারছেন না। অন্যদিকে পাশে বসে এক মাস বয়সী মেয়ে শিশুকে কোলে নিয়ে উদ্বেগউৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বামী মোস্তাক মিয়ার। শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে মেয়ের যাতে ঠাণ্ডা না লাগে তাই বারবার কম্বল টেনে দিচ্ছিলেন।

জানতে চাইলে মোস্তাক মিয়া বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আমার স্ত্রী বাচ্চা ডেলিভারির পর থেকে স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে এক পর্যায়ে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকায় বারান্দার মেঝেতে আছি। বারান্দায় ঠাণ্ডা ও মশার উপদ্রবের কারণে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। এত বড় হাসপাতাল একটা বেড পর্যন্ত পাচ্ছি না। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে এখানে এক মুহূর্তও থাকতাম না। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আসিফুল হক বলেন, জাহানারা বেগম স্নায়ু রোগে আক্রান্ত। আমরা তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। ওয়ার্ড থেকে অনেক রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। ভিতরে খালি হলেই ওনাকে বেডে স্থানান্তর করা হবে।

গতকাল দুপুরে নিউরোলজি ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, জাহানারা বেগমের মতো আরো ২৫৩০ জন রোগীকে মেঝেতে বেড পেতে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে সেখানে কোনো জরুরি রোগীকে অঙিজেন দেয়ার ব্যবস্থা নেই। রোগীদের অনেকটা গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা রয়েছে মাত্র ৩৩টি। এরমধ্যে রোগীর বাড়ার কারণে ওয়ার্ডে বেড বসানো হয়েছে ৮৫টি। বর্তমানে ওয়ার্ডের ভিতরে ও বাইরে মিলে গড়ে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে। এখন ২৪ ঘণ্টা ভর্তি চালু হওয়ায় সেই সংখ্যা আরো বাড়ছে। নিউরোলজি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, ওয়ার্ডে বেড থাকুক, আর না থাকুক, আমাদের সপ্তাহে এখন ছয়দিন ২৪ ঘণ্টা ভর্তি নিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের ভিতরের বেড ও মেঝে ছাড়িয়ে এখন গেটের বাইরে সিঁড়ির পাশের বারান্দাতেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এটি সরকারি হাসপাতাল যত রোগীই আসুক, সবাইকে ভর্তি দিতে হবে। তবে রোগীদের চিকিৎসায় কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।

জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি ওয়ার্ডে এক সময় সরাসরি ভর্তি করা যেত না। কেবল সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে যারা নিউরোলজি ওয়ার্ডে আসতেন, তাদের ওয়ার্ডে সরাসরি ভর্তি দেয়া হতো। এই সময়ের বাইরে আসা রোগীদের মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তারপর নিউরোলজি ওয়ার্ডে পাঠাতেন বিভাগের চিকিৎসকরা। তবে গত বছরের পহেলা নভেম্বর থেকে ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা ভর্তি শুরু হওয়ার কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিতর্কের মধ্যেই বিরোধী দলীয় নেতা মনোনীত করল জাতীয় পার্টি
পরবর্তী নিবন্ধকোভিডের উপধরন জেএন.১ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও