নগরীর বায়েজিদে রেবেকা সুলতানা মনি নামের এক নারীকে শ্বাসরোধে খুনের দায়ে নেজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই রায়ে আব্দুল হালিম নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া রায়ে আবু সিদ্দিক রুবেল নামে অপর একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরা এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নেজাম উদ্দিন কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল হালিম পলাতক আছেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। নেজাম উদ্দিন রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ও আব্দুল হালিম ভোলার চরফ্যাশন এলাকার এবং আবু সিদ্দিক রুবেল বায়েজিদের মিদ্দাপাড়ার বাসিন্দা।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেছেন। আসামিদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১১ মে নগরীর বায়েজিদ মুরাদনগর মিদ্দাপাড়া এলাকায় একটি ভবনে রেবেকা সুলতানা মনি নামের ওই নারী খুন হয়। ১৩ মে দুর্গন্ধ বের হলে পুলিশ সেখান থেকে মনির লাশ উদ্ধার করে। মৃতদেহের শরীরে ততক্ষণে পচন ধরেছিল। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার এসআই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল নেজাম উদ্দিন, আব্দুল হালিম ও আবু সিদ্দিক রুবেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
চার্জশিটে বলা হয়, মূলত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে নেজাম উদ্দিন। আব্দুল হালিমের নির্দেশে নেজাম উদ্দিন ওই নারী মনিকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। আর আবু সিদ্দিক রুবেল ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। বলা হয়, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ভিকটিম নারীর ফোন নিয়ে সটকে পড়েন নেজাম উদ্দিন। সেই ফোনের সূত্র ধরে ঘটনার এক সপ্তাহ পর নেজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, ঘটনার ৫ মাস আগে মনি, আব্দুল হালিম ও অপর এক নারী ঘটনাস্থলের বাসায় উঠেন। আব্দুল হালিম তখন নিজেকে আব্দুল মজিদ নামে পরিচয় দেন। তিনি বাসা ভাড়া নিয়ে কয়েকজন নারীকে সেখানে রেখে তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির কাজ করাতেন। তার সাথে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে নেজাম উদ্দিন বাসাটিতে প্রায় যেতেন। নেজাম ফার্নিচার দোকানকর্মী। চার্জশিটে আরো বলা হয়, মনি তার আয়ের টাকা আব্দুল হালিমের কাছে রাখতেন। মনি বোনের বিয়ে দিতে সে টাকা খুঁজলে বাধে বিপত্তি। ক্ষুব্ধ হন আব্দুল হালিম। একপর্যায়ে মনিকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। চাওয়া হয় নেজাম উদ্দিনের সহযোগিতা। অতঃপর নেজাম উদ্দিন পরিকল্পনা মতো খুনের মিশন সম্পন্ন করেন। আদালত সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে মামলার বিচার শুরু করেন বিচারক।