হেফাজতে ইসলামের আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু ‘স্বাভাবিকভাবে’ হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন মাদ্রাসাটির শিক্ষকরা। ছাত্রদের বিক্ষোভে মাদ্রাসার শিক্ষক এবং বাইরের কোনো সংগঠন ও ব্যক্তির উস্কানি ছিল না বলেও দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। জুনাইদ বাবুনগরীসহ মোট ১২ জন শিক্ষকের তরফে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হাটহাজারী মাদ্রাসার বর্তমান পরিস্থিতি ‘শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল’ রয়েছে। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তার ছেলে আনাস মাদানির এক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে এই বিবৃতি এল। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হযরতের (আহমদ শফী) মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। এরপরও কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা ব্যক্তির হীন স্বার্থ উদ্ধারে হযরতের লাশ নিয়ে রাজনীতি করা এবং কওমী অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ঠিক হবে না।’ খবর বিডিনিউজের।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের পরিচালক আহমদ শফী মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শফী ও তাঁর ছেলে আনাস মাদানির অনুসারী হেফাজত নেতারা দাবি করেন, ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে অসুস্থ আহমদ শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স কয়েক ঘণ্টা মাদ্রাসায় আটকে রাখা হয়। এর আগে শূরার বৈঠকে অসুস্থ আহমদ শফীর কাছ থেকে ‘জোর করে’ বিভিন্ন সিদ্ধান্তে সম্মতি নেওয়া হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে শফীর জানাজায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতির পর এ নিয়ে বির্তক নতুন মোড় পায়। এদিকে আহমদ শফীর দাফনের দিনেই মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শূরা কমিটি, আর জুনাইদ বাবুনগরী মাদ্রাসার প্রধান শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব পদে ফেরেন।
গতকাল সোমবার মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্বজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় হাটহাজারী মাদ্রাসা শূরা কমিটির হাতে সোপর্দ করে গেছেন এবং উনার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। হযরতের মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত ও শোকাহত।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মাদ্রাসার অবস্থা খুবই ভালো। নিয়মিত ক্লাশ চলছে। আল–হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমীয়ার পরীক্ষাও সুন্দরভাবে চলছে। কোনো সমস্যা নেই। মাদ্রাসার শিক্ষকগণ, ছাত্র এবং এলাকাবাসী খুবই সন্তুষ্ট। হাটহাজারী মাদ্রাসা শাহ আহমদ শফীর ‘উসুল অনুযায়ী’ চলছে জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির তিন সদস্য মুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ আহমদ ও মাওলানা মো. ইয়াহিয়া রয়েছেন। আরও আছেন– মুফতি নূর আহমদ, সহকারী শিক্ষা সচিব হাফেজ শোয়াইব, মাওলানা ওমর মেখলী, মাওলানা মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা কবীর আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নেজামপুরী, মাওলানা হাফেয আহমদ দিদার কাসেমী এবং মাওলানা ফোরকান আহমদ।
উল্লেখ্য আহমদ শফীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে সমপ্রতি হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিরোধ দেখা দেয়। মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী ছিলেন শীর্ষ পদের অন্যতম দাবিদার। কিন্তু শফী সমর্থকদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ১৭ জুন তাকে সরিয়ে সহকারী পরিচালক করা হয় শেখ আহমদকে। শফী সমর্থকরা সেই দফা টিকে গেলেও তার রেশ থেকে গিয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর মাদ্রাসা খোলা হলে ১৬ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। তারা শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুরও চালায়।