‘ওঠ শিশু মুখ ধোও, পর নিজ বেশ/ আপন পাঠেতে মন কর হে নিবেশ’– খুব ছোটবেলায় ৩/৪ বছর বয়সে এই লাইন দু‘টি বলে বিছানা থেকে উঠিয়ে হাতে ব্রাশটা ধরিয়ে দিতেন আমার বাবা। ছোট একটা ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে বাবার হাতেই আমার হাতেখড়ি। রামসুন্দর বসাকের ‘আদি বাল্যশিক্ষা’ দিয়েই শুরু স্বরবর্ণের পাঠ। এখনো যেন সুর করে পড়ে যাচ্ছি –ইংরেজি বর্ণমালা, শব্দাংশ গঠন – বা,বে…। পাশাপাশি শতকিয়া, যোগের নামতা, বিয়োগের নামতা আর গুণের নামতা। বাবা বলতেন, এক নিঃশ্বাসে বলতে হবে। তাই আমিও এক নিঃশ্বাসেই বলে যেতাম। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কেআরসি–র চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নিজ এলাকার শিক্ষার প্রসারকল্পে সদ্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় আব্বার হাত ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমার বাবার শিক্ষকতা জীবনের শুরু। নিজ এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে বাবা–মাকে বুঝিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করাতেন। বাবার সাথে সহযোদ্ধা হয়ে সবসময় পাশে ছিলেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব মরহুম জামির হোসেন। পেশাগত জীবনে আমিও একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেই সুবাদে বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রশিক্ষণে নিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হই। কারণ, ইদানীংকালে আমি যেসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি তার অনেক কিছুই আমি প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে আমার বাবাকে প্রয়োগ করতে দেখেছি। আমার বাবাই আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, আমার প্রথম শিক্ষাগুরু।