সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের দুই ভাতিজিকে ঢাকার গুলশানে তাদের বাবার বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গুলশান থানায় জিডিও করেছেন ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে মুশফিকার মোস্তফা ও মোবাশশারা মোস্তফা। তারা বলেছেন, আনজু কাপুর নামে এক নারী, যিনি নিজেকে জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করছেন, তিনিই তাদের বাসায় ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন। এদিকে ভারতীয় নাগরিক আনজু কাপুরও জোর করে বাসায় ঢোকার অভিযোগে জিডি করেছেন থানায়। পুলিশ বলছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে। মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ ছিলেন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন। গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৯৫ নম্বর রোডের ৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ওই বাড়ি তারই করা। জগলুল ওয়াহিদ ২০০৫ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান; ওই বছরই স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। পরে তার স্ত্রী গুলশানেই অন্য এক বাসায় ওঠেন। মুশফিকা ঢাকায় তার মায়ের সঙ্গে থাকেন। আর মোবাশশারা স্বামীর সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ১০ অক্টোবর বাবার মৃত্যুর পর দাফন শেষে দুই বোন গুলশানের ওই বাসায় ঢুকতে গিয়ে বাধা পান বলে তাদের অভিযোগ। এ বিষয়ে ১২ অক্টোবর তারা গুলশান থানায় জিডি করেন। পরে শনিবারও তারা ওই বাসায় গিয়ে ঢুকতে পারননি বলে জানান। গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, জিডি দুই পক্ষই করেছে। দুই বোনোর পক্ষ থেকে একজন জিডি করেছেন তাদেরকে বাসায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আবার জোর করে বাসায় ঢোকার অভিযোগ দিয়ে থানায় জিডি করেছেন জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতের বেঙ্গালুরোতে জন্ম দেওয়া আনজু কাপুর প্রায় এক দশক ধরে ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি পেশায় একজন পোশাক ব্যবসায়ী, আরিয়ানা স্টাইলস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। বলিউডের তরুণ চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক ধীরাজ কাপুর তার ছোট ভাই।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিয়ের যে কাগজপত্র তিনি দিয়েছেন, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার বিধান নেই। সে কারণে আনজু কাপুরকে সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগ ওসিহত করে দেওয়া হয়েছে বলে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের একটি নথি পাওয়া গেছে। সেটাও যাচাই করা হচ্ছে। আমিনুল ইসলাম বলেন, জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে গত ১৫ বছর ধরে ওই বাসায় যান না। বাবা মারা যাওয়ার পর তারা ওই বাসায় গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, আনজু কাপুর আমার ভাইয়ের লিগ্যাল স্ত্রী। উনি হিন্দু, কিন্তু ব্রিটিশ আমলের আইনে উনাদের সিভিল ম্যারেজ হয়েছে বলে আমি জানি। ভাতিজিদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মেয়েরা ওই বাড়িতে এতদিন পর এসেছে, তো আমার যেটা মনে হয়, ভদ্রমহিলা হয়ত নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। বিডিনিউজ
তবে মেয়েদের অধিকার কারো নেওয়ার ক্ষমতা নেই। কোর্টে গেলেই কিন্তু নিষ্পত্তি হয়। থানায় নিশ্চয় মেয়েরা গেছে। আবার বড়ভাইয়ের স্ত্রীও গেছে। পুলিশ তো বলবে, পারিবারিক আদালতে চলে যান। এটা তো রাস্তায় নিষ্পত্তি হবে না, কোর্টে যেতে হবে। বাবার তিন ভাগের দুই ভাগ তো মেয়ের পাওয়ার কথা।
ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, তারা ভাইবোনরা আনজু কাপুরকে সহযোগিতা করছেন বলে একটা কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তা ঠিক না। তিনি ছাড়া ভাই-বোনদের সবাই বিদেশে। আমি নিজেও ঢাকায় নেই, অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রামে বিশ্রামে রয়েছি। আমি এর মধ্যেই নাই, আমি এই বাড়ির মালিকও না। ওটা আমার বড় ভাইয়ের বাড়ি। উনার যারা উত্তরাধিকার আছে, তারাই তো পাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে অভিযোগ করেছেন, তাদের বাবার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফনে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, উনার মৃত্যুর আগের দিন ঢাকায় গিয়েছিলাম। শেষ দিন উনার কোভিড ধরা পড়েছে। বনানীতে দাফনের চেষ্টা করেছি। বনানীতে কোনোক্রমেই সম্ভব হয়নি। মেয়র সাহেবকে অনুরোধ করে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেছি।