পাহাড়ি জেলা বান্দরবান মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের পদচারণায়। দর্শনীয় স্থানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে টানা তিনদিনের সরকারি ছুটিতে। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজ কোথাও ফাঁকা নেই রুম।
আবাসিক হোটেলগুলোতে সিট না পেয়ে বেড়াতে পর্যটকরা এখন ছুটছেন দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাচাং ঘরগুলোকে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে। অর্থের বিনিময়ে রাত্রী যাপন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং টুরিস্ট গাইড্ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি ছুটি মানেই বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের বাড়তি চাপ। একুশে ফেব্রুয়ারি সহ টানা তিন দিনের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছে বান্দরবানে। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে লেকের উপর নির্মিত দু’টি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন স্পটের টাওয়ার, দৃষ্টিনন্দন ভিড় পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেন পর্যটকরা।
পাহাড়ের সাথে আকাশ যেন মিতালী গড়েছে নীলাচল পর্যটন স্পটে। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, নীল দিগন্ত, শীতা পাহাড় এবং সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পটে গিয়ে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পর্যটকরা। অসংখ্য পাহাড়ের মধ্যখানে গড়ে তোলা পর্যটন স্পটগুলো যেন সাদা মেঘে ভাসছে।
অপরদিকে শৈলপ্রপাত, ফারুকপাড়া ঝর্ণা, রূপালী ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে গাঁ ভাসাচ্ছে পর্যটকরা। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাশে বসেই পাহাড়ীদের কোমর তাঁতে তৈরি কাপড় বিক্রি করছে তরুণীরা। এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থ স্থান বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদি, রামাজাদি, প্রান্তিকলেক এবং সাঙ্গু নদীতে নৌকা নিয়েও ছুটে বেড়াচ্ছে পর্যটকেরা।
বেড়াতে আসা পর্যটক রিদোয়ান, সাব্বির, মারিয়া, নাদিয়া বলেন, অসংখ্য সৌন্দর্যের সংমিশ্রনে গড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জেলা বান্দরবান। পাহাড় থেকে ঝড়ে পড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গসহ অসংখ্য পাহাড়। পর্যটকের মন ভোলানোর সমস্ত আয়োজনই রয়েছে এ জেলায়। তবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংকট এখনো রয়ে গেছে বোধয়। দূর্গমাঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো সংরক্ষণ এবং ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া দরকার।
অপরদিকে মৃত্যুর ঝুকি নিয়েই জেলার থানচি, রোয়াংছড়ি, রুমা এবং সদর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করছে পর্যটকদের অনেকে। রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম, শীলবান্ধা ঝর্ণা, থানচি উপজেলার রেমাক্রী বড়পাথর, নাফাখুম, অমিয়খুম ঝর্ণা, সাতভাইখুম, রুমা উপজেলার জাদীপাই ঝর্ণা, রোমানাপাড়া ঝর্ণা, চিংড়ি ঝর্ণা, রিজুক ঝর্ণা, বগালেক, ক্যাওক্রাডং পাহাড় চূড়া, আলীকদম উপজেলার ডিমপাহাড়, দামতুয়া ঝর্ণা, করুকপাড়া ঝর্ণা সহ দর্শনীয় স্পটগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা।
দর্শনীয় স্থানগুলো যথটা দৃষ্টিনন্দন তার চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক তবে রহস্যময় ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটন স্পটগুলোতে।
জেলা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারি সহ টানা ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে দৃশ্যপট যেন অনেকটাই বদলে গেছে। পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে বান্দরবানে। আগামী দু’দিন আবাসিক হোটেলগুলোতে কোথাও কোনো রুম খালি নেই। যতটুকু জেনেছি পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে কাজ করছে মালিক সমিতি।”