পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারে পাওয়া প্রায় তিন কোটি ভারতীয় জাল রুপি আটকের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পৃথক দুই তদন্ত সংস্থার চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া এজাহারনামীয় আসামি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক আহমেদুল্লাহকে অন্তর্ভুক্ত করেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত । চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী গতকাল আজাদীকে বলেন, ২০১৫ সালে ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধারের মামলায় তদন্ত সংস্থা পিবিআই কর্তৃক অন্যতম এক আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি আদালত যুক্তিযুক্ত মনে করেননি। তাই গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে আদালত ওই আসামিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দিয়ে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি উভয়পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, এর আগে সিআইডির চার্জশিটেও ওই আসামিকে বাদ দেয়া হয়েছিল। তখন আদালতে আমি নারাজি দিয়েছিলাম। এর প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বন্দরে একটি কন্টেইনার খালাসের সময়
আমদানি নিষিদ্ধ ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ’ ভারতীয় জাল রুপিসহ অন্যান্য সামগ্রী আটকের ঘটনায় তখন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের রাজস্ব কর্মকর্তা বিধান কুমার সরকার বাদী হয়ে বন্দর থানায় ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন, সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফ্ল্যাশ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান এ এস এম সায়েম শামীম, সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান নাহার ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের আহমেদুল্লাহ তালুকদার, মো. আসাদ উল্লাহ, তৌহিদুল আলম, শেখ সাবের ও আমদানিকারক মো. শহীদুজ্জামান। প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও ওই বছরেই সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেন। ২০১৯ সালে ৩০ অক্টোবর সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম টিম আমদানিকারক মো. শাহিদুজ্জামান জয়নালকে (৩২) এক নম্বর আসামি করে মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলায় এজাহারনামীয় তৌহিদুল আলম (২৮), এ এস এম সায়েম শামীম (৩৭), আসাদ উল্লাহ (৩৮), শেখ সাবের (২৪) ছাড়াও আব্দুর রহিম বিলাস(২৮) নামে এজাহার বহির্ভূত আরেকজনকে আসামি করা হয়েছে। এ সময় এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক আহমেদুল্লাহর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে ওই আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়। এটা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নারাজি দেয়ায় পরবর্তীতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে নির্দেশনা দেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সিআইডির মতো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও একই আসামির(আহমেদুল্লাহ) ঘটনার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে আদালত শুনানিতে ওই আসামিকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দিয়ে পিবিআই’র অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন।
ঘটনাটির তদন্তে উঠে আসে, প্রতি বছর কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভারতীয় গরু বিক্রি হয়ে থাকে। এ সময় বাংলাদেশি টাকা লেনদেনের পাশাপাশি ভারতীয় রুপিতেও গরু ক্রয়-বিক্রয় হয়। এ সুযোগে ভারতীয় জাল রুপি(মুদ্রা) বাজারে ছেড়ে দেয়ার জন্য অভিযুক্ত আসামিরা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জাল মুদ্রা এনে তা বাজারে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে ১৮ আগস্ট দুবাইয়ের জেবাল আলী টার্মিনাল থেকে কন্টেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সেপ্টেম্বরে কন্টেইনারবাহী জাহাজটি শ্রীলংকার একটি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছে।