বাড়ি ফেরার দিন আজ

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২ মার্চ, ২০২৪ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

পরিবর্তিত স্থানে মেলা জমবে? এমন প্রশ্নবোধক দিয়েই শুরু হয় এবার বইমেলা। আজ শনিবার সাঙ্গ হচ্ছে ২৩ দিনব্যাপি এ বইমেলার। অর্থাৎ আজ বাড়ি ফেরার দিন। এর আগে গতকাল পর্যন্ত প্রতিদিন প্রচুর পাঠকদর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ সিআরবি শিরীষতলা। প্রতিদিনের এ ভীড় দেখে যে কেউ দাবি করবে, মেলা জমেছে। তবে বইমেলার সঙ্গে প্রকাশকদের বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত। তাই পরিবর্তিত স্থানে মেলা বাণিজ্যিকভাবে কতটা সফল হয়েছে তার প্রকৃত তথ্য মেলায় অংশ নেয়া প্রকাশকরাই ভাল জানবেন। যদিও এ বিষয়ে মেলার শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রকাশক বা স্টলের বিক্রয়কর্মীদের প্রায় সবার বক্তব্য ছিল, ‘বেচাকেনা মোটামুটি হয়েছে’। অর্থাৎ প্রকাশকরা অসন্তুষ্ট নন। তাই প্রকাশকদের সন্তুষ্টি এবং লেখক, পাঠক ও দর্শনার্থীর স্বতঃস্পূর্ত অংশগ্রহণে বলা যায়, এবার বইমেলা জমেছে।

গতকাল বইমেলায় কথা হয় সীতাকুণ্ড থেকে আসা পাঠক রায়হানের সঙ্গে। তিনি আজাদীকে বলেন, সরকারি চাকরি করি। প্রতিদিন আসার সময় পাইনি। তবে মেলা শুরুর পর থেকে প্রতি শুক্রবার এসেছি। প্রত্যেকবার বইও কিনেছি। রায়হানের দাবি, মেলা জমেছে। এদিকে মেলা শুরুর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে বন্ধের দিনগুলোতে মেলায় উপচেপড়া ভীড় দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার পূর্বের সপ্তাহের তুলনায় কম ছিল। এদিন বিক্রি পূর্বের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের চেয়ে বেশি হয়েছে বলে কয়েকটি স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, শেষ মুহূর্তে মেলায় যারা এসেছেন তারা কিনতেই এসেছেন।

গতকাল শালিক প্রকাশনের স্বত্তাধিকারী আখতারুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, খারাপ হয়নি। মোটামুটি সাড়া পাচ্ছে। একই কথা বলেন বাতিঘরের বিক্রয়কর্মী বাবলু চৌধুরী ও কথাপ্রকাশের রাজু। স্বাধীন প্রকাশনের হৃদয় হাসান বাবু আজাদীকে বলেন, শুক্রবার হিসেবে আজ (গতকাল) বিক্রি কম হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়। আজ সমাপনী দিনে মেলার দরজা খুলবে সকাল সাড়ে ৯টায়। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

নতুন বইয়ের খবর : বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইগুলোর মধ্যে অক্ষরবৃত্ত থেকে বেরিয়েছে মানজুর মুহাম্মদের কিশোর উপন্যাস ‘সোনার মানুষ’, দ্বিমত প্রকাশ থেকে বেরিয়েছে মাঈন উদ্দিন জাহেদের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘আদ্দাসের এক থোকা আঙ্গুর, প্রিয় বাংলা থেকে বেরিয়েছে সারোয়ার রানার ছড়ার বই ‘ষড়ঋতুর বাংলাদেশ’, আপন আলো থেকে বেরিয়েছে জহির সিদ্দিকীর ‘ইতিহাসঐতিহ্যে মহেষখালী’ ও বাতিঘর থেকে বেরিয়েছে আনোয়ার হোসেন পিন্টু’র গল্প সংকলন ‘বিজিত জ্যোৎস্নার দাহ’।

এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে রচিত অনন্য এক কিশোর উপন্যাস ‘সোনার মানুষ’। এ গ্রন্থে পাখির মুখে ব্যতিক্রমী বর্ণনায় ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকৈশোর আর রাজনৈতিক জীবনের মহৎ ও আলোকোজ্জ্বল অধ্যায়। ফুটে উঠেছে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপার ত্যাগ ও আপোষহীনতার কথা। এই প্রথম কোনো লেখায় বিস্ময়করভাবে উঠে এসেছে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাখিদেরও ত্যাগের কথা।’

ইরাকের বাসিন্দা আদ্দাস। যিনি সত্যানুসন্ধান করতে গিয়ে পৌঁছে যান আরবের তায়েফ নগরে। সেখানে তিনি দেখা পান সত্যের আলোকবার্তা নিয়ে আসা বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) এর। বিষয়টি ভাবায় কবি মাঈন উদ্দিন জাহেদকে। সে ভাবনার প্রতিফলন ঘটে তার ‘আদ্দাসের এক থোকা আঙ্গুর’ কাব্যগ্রন্থে। মাওলানা রুমিসহ অন্যান্য সুফিধারার কবিরা যে ধারায় ‘আত্মার খোরাকে’র জন্য কবিতা লিখেছেন এবং বাংলায় সুুফি ঘরানার কবিরা যে কাব্য চর্চা করেছেন সে ধারাকে পুনরায় বাংলাসাহিত্যে চর্চার চেষ্টা হয়েছে ‘আদ্দাসের এক থোকা আঙ্গুর’এ।

বিজিত জ্যোৎস্নার দাহ’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছেরমজানের পায়ের শব্দ শুনে একপাশে ছিটকে সরে এলেন রফিক সাহেব। আগের মতই প্রবল দাপটে গটগট করে বেরিয়ে এল লোকটা। বাইরে দাঁড়ানো রফিক সাহেব আর সাবিনার দিকে একবার বিষদৃষ্টি ছুড়ে মিলিয়ে গেল ওপাশের ছোট্ট ঘরটার দিকে। রফিক সাহেব তখন কাঁপছেন। রাগে, না ভয়ে, না ক্ষোভে তা বুঝতে পারছেন না। মনে হল, চেম্বারের ভেতরেও যা ঘটে গেল, তারও নাম ধর্ষণ। সাবিনাও সব শুনেছে এতক্ষণ, চুপচাপ, শান্তভাবে। তার বাবার নীল হয়ে যাওয়া মুখখানার দিকে তাকিয়ে সে মরমে মরে গেল। কাঁপাকাঁপা ঠোঁট দুটো দিয়ে অস্ফুট কণ্ঠে শুধু বলল, ‘কী দরকার! থাক না বাবা। এরকম তো কতই ঘটছে।’

ছড়ায় ছড়ায় বাংলার অপরূপ প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তুলেছেন সারোয়ার রানা, তার ‘ষড়ঋতুর বাংলাদেশ’ গ্রন্থে। ‘ছড়াগুলো যেন ছড়া নয়, দেশমাতৃকার বন্দনা। দেশ ও দেশের মানুষ ছড়াকারের অরাধ্য, পূজ্য তাই যেন স্পষ্ট হয়েছে গ্রন্থভুক্ত ৪২টি ছড়ায়’।

ইতিহাসঐতিহ্যে মহেষখালী’ গ্রন্থ সম্পর্কে এর লেখক জহির সিদ্দিকী বলেন, মহেশখালীর জন্ম থেকে অদ্যাবধি সময়ের নানান উপজীব্য বিষয়কে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এ গ্রন্থে নানাবিধ তথ্যের উৎস, যৌক্তিক বিচার তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সে বিবেচনায় বইটি একটি যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা বলার দাবী রাখে।

সেরা স্টল : এবার সেরা স্টল হিসেবে অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন প্রথম স্থান লাভ করে। এছড়া বাতিঘর প্রকাশন দ্বিতীয় স্থান এবং প্রথমা প্রকাশন ও বিদ্যানন্দ যৌথভাবে তৃতীয় পুরস্কার অর্জন করে। বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইলের পরিবর্তে বই তুলে দিন
পরবর্তী নিবন্ধনগরের ৪৭টি গ্যাংয়ে সক্রিয় ৫৩৫ কিশোর