বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

| মঙ্গলবার , ৩ জুন, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

নতুন অর্থবছরে শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করায় কিছু পণ্য ও সেবার দাম বাড়তে পারে। গতকাল বাজেটে শুল্কহার পরিবর্তনের এ প্রস্তাব রেখেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মোবাইল ফোন : মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দুই ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ করে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

সিগারেট : সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ১৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০০ শতাংশের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তামাক বীজ আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সিগারেটের সম্ভাব্য মুনাফার ওপর ৩ শতাংশের বদলে আরোপ করা হয়েছে ৫ শতাংশ।

চকোলেট ও সাজসজ্জা উপকরণ : চকোলেট এবং সাজগোজের বিভিন্ন উপকরণ শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

সাবান, শ্যাম্পু : স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামালের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে দাম বাড়তে পারে এসব পণ্যের।

ফ্রিজ, এসি : রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও তাদের কমেপ্রসর, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার এবং আইডল স্টার্টস্টপ ব্যাটারি স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়তে পারে এসব পণ্যের।

সেট টপ বক্স, কলম : টিভি দেখার সেট টপ বক্স, বলপয়েন্ট কলম এবং কিছু সার্জিকাল পণ্যে আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়তে পারে এসব পণ্যের।

লিফট : লিফট, স্কিপ হোয়েস্ট ও এস্কেলেটরের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এলপিজি সিলিন্ডার : স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে এর অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে সিলিন্ডারের দাম সামান্য বাড়তে পারে।

ওয়াশিং মেশিন, ওভেন : ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেনের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম সামান্য বাড়তে পারে। বিভিন্ন ধরনের ওভেন, কুকিং প্লেট, বয়েলিং রিং ইত্যাদির প্রতি ইউনিটের ন্যূনতম মূল্য ৬ ডলার থেকে ১২ ডলার করা হয়েছে।

ব্লেন্ডার, রাইস কুকার : ব্লেন্ডার, জুসার, মিঙার, গ্রাইন্ডার, ইলেক্ট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার ও প্রেসার কুকারের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এগুলোরও দাম সামান্য বাড়তে পারে।

থ্রিহুইলার : ফোর স্ট্রোক থ্রিহুইলারের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে এর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

গাড়ির যন্ত্রাংশ : দাম বাড়ছে গাড়ির যন্ত্রাংশেরও। সামনের ও পেছনের কাঁচ (উইন্ডশিল্ড) এবং জানালার কাঁচের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্রেক লাইনিং ও ব্রেক প্যাডের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্রেক ও সার্ভো ব্রেক এবং এর যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গিয়ার বঙ ও এর যন্ত্রাংশ, ডিফারেন্সিয়ালসহ ড্রাইভ এঙেল, নন ড্রাইভিং এঙেল এবং এগুলোর যন্ত্রাংশ, চাকা ও এর যন্ত্রাংশ, শক এবজর্বারসহ সাসপেন্সন সিস্টেম, রেডিয়েটর ও এর যন্ত্রাংশ, সাইলেন্সারমাফলারসহ এঙস্টের যন্ত্রাংশ, ক্লাচ অ্যাসেম্বলির যন্ত্রাংশ, স্টিয়ারিং হুইল, স্টিয়ারিং কলাম, স্টিয়ারিং বঙ ও এর যন্ত্রাংশ, এয়ারব্যাগ ও এর যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গাড়ির তালা ও প্যাডলকের ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য আড়াই থেকে ৩ ডলার করা হয়েছে।

ইস্পাত : হালকা ইস্পাতের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কার্পাস তুলা : উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করহার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ইয়ার্ন : কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্ন উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করহার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

ব্লেড : উৎপাদন পর্যায়ে ব্লেডের ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে দাড়ি কাটতে গুনতে হতে পারে বাড়তি অর্থ।

তার কাটা : তার কাটা ও টোপকাটাসহ বিভিন্ন প্রকারের স্ক্রু, জয়েন্ট (কানেক্টর), নাট, বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার এবং পোল ফিটিংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ দশমিক ৫ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এলইডি বাল্ব : এলইডি বাল্ব ও এলইডি মডিউলের আমদানি শুল্ক ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

আসবাবপত্রের তালা : শুল্কায়নের ক্ষেত্রে ফার্নিচারের তালার ন্যূনতম মূল্য ৩ থেকে সাড়ে তিন এবং দরজার তালার ন্যূনতম মূল্য ৪ থেকে বাড়িয়ে ৫ ডলার করা হয়েছে। এসব কেজিপ্রতি হিসাবে ন্যূনতম মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হবে।

খেলনা : ফোলানো যায়এমন খেলনা, বেলুন, খেলনা লেজার লাইট, মার্বেল, পাফার, খেলনা মুখোশ ইত্যাদির ন্যূনতম মূল্য সাড়ে ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ ডলার করা হয়েছে।

মার্বেল, গ্রানাইট : বিভিন্ন ধরনের মার্বেল ও গ্রানাইটের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সেবা : নির্মাণ সংস্থা সেবার মূল্য সংযোজন কর ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেল্ফ কপি পেপার, ডুপ্লেঙ বোর্ড, কোটেড পেপারের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালী সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২০২৫২৬ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৭ প্রকল্পে বরাদ্দ ৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল