কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে ধীরে ধীরে বাড়ছে ইলিশ ধরা। গত ৩ আগস্ট থেকে সাগরে ফের মাছ ধরা শুরু হলেও এতদিন জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। তবে গত কয়েকদিন ধরে আশা জাগাচ্ছে জেলেদের। গতকাল শুক্রবার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট থেকে রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ২০ মেট্রিক টন ইলিশ। অথচ আগের শুক্রবার মাত্র ৪ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকায় পাঠানো হয়।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই কক্সবাজারের মাছধরা ট্রলারগুলো সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে আসে। এরপর টানা ১০ দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর গত ৩ আগস্ট থেকে ট্রলারগুলো মাছ ধরতে বঙ্গোপসাগরে রওয়ানা দেয়। এর ৫/৬ দিন পর ট্রলারগুলো মাছ ধরে ঘাটে ফিরতে শুরু করলেও বঙ্গোপসাগরে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মেলেনি। গত শুক্রবার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটে মাত্র ৪ মেট্রিক টন ইলিশ এলেও আজ শুক্রবার (গতকাল) এসেছে অন্তত ২০ মেট্রিক টন ইলিশ। আর এ ঘটনা আশা জাগাচ্ছে জেলেদের।
তিনি জানান, ধরা পড়া ইলিশগুলো আকারে ২শ গ্রাম থেকে ৯শ গ্রামের মধ্যে। তবে শতে দুয়েকটি ইলিশ আকারে ১ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১২শ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আকারভেদে ইলিশের দামও একেক রকম। গড়ে আড়াইশ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশের দাম ৫শ টাকা, ৫শ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশের দাম ৮শ টাকা, ৯শ গ্রাম ওজনের এককেজি ইলিশের দাম ১৪শ টাকা এবং এক কেজি তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ১ হাজার ৫শ টাকার বেশি।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। যারমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো ৮/১০ দিনের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ৭/৮ আঙুলের ফাঁসযুক্ত ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। এই ধরনের বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ ধরা হয় ৪ থেকে ৫ আঙুলের ফাঁসযুক্ত সুতার জাল দিয়ে, যেটি ভাসা জাল নামেই জেলেদের কাছে পরিচিত। আর সাগর থেকে তাইল্যা ও কোরাল মাছ ধরা হয় ২ থেকে ৩ আঙুলের ফাঁসযুক্ত এক ধরনের রক জাল দিয়ে, যেটি তাইল্যা জাল নামেই পরিচিত। ট্রলারগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এখন সাগরে আসা–যাওয়া করছে।