বাজেট উদ্ভাবনমূলক নয়, সাহসী পদক্ষেপ নেই : সিপিডি

| শুক্রবার , ৭ জুন, ২০২৪ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগসিপিডি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চ্যালেঞ্জিং সময়ে এই বাজেট ‘উদ্ভাবনমূলক ও সাহসী পদক্ষেপ নেই’। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবের পর সন্ধ্যায় সিপিডির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। খবর বিডিনিউজের।

সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচক সিপিডি মনে করে, বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা ও ক্রান্তিকালীন সংকটের সমাধানে বাজেটে যথাযথ পদক্ষেপ ও দিক নির্দেশনা নেই। ফাহমিদা বলেন, এত একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেটটা দেওয়া হল, আমাদের আশা ছিল এ বাজেটটা অনেকটা উদ্ভাবনমূলক হবে। এখানে সৃজনশীল কিছু পদক্ষেপ থাকবে এবং কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ, এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। আগামী বছরের বাজেটটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে অতীতের আরেকটি বাজেটের মতই।

বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি করের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, কর ছাড় কমানোর চেষ্টা করেছেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজস্ব আহরণের জন্য অনেক জায়গায় প্রচেষ্টা দেখছি। যেমনদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের জুসের উপর করারোপ করা হয়েছে, মোবাইল ফোনের টকটাইম, এমিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্কে এন্ট্রি ফি দেওয়া হচ্ছে। প্রকারান্তরে এগুলো ভোক্তাদের উপরে গিয়ে পড়বে, ভোক্তারাই দেবে। এমনিতেই মানুষের উপরে মূল্যস্ফীতির চাপ, তারপর এ রকম বাড়তি কিছু কর থাকে কিংবা পেমেন্ট করার বিষয় থাকে; সেগুলো মানুষের জীবন যাত্রাকে আরও কঠিন করে দেবে। দুই বছর ধরেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হলেও অর্থমন্ত্রী সেটি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন। সিপিডি নির্বাহী পরিচালক বলেন, গত ২৪ মাস ধরে ৯ শতাংশের উপরে, ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই করছে। আমরা এক বছরের মধ্যে সাড়ে ৬ শতাংশে কমিয়ে আনব কীভাবেসেটাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এ যে লক্ষ্যমাত্রা, এতে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই বলে আমাদের মনে হয়েছে।

বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়েই অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে, এ নিয়ে প্রশ্নও করা যাবে না। আমরা সিপিডির পক্ষ থেকে প্রতিবারই বলেছিএটা একেবারে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, অর্থনৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়। সামাজিক যে ন্যায়বিচার, সেটাও কিন্তু এটা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো বিশেষ গোষ্ঠীদের কথা মনে রেখে করা হয়। কিন্তু ফলাফল দেখা যায়নি, কালো টাকা সাদা করার খুব একটা জোয়ার এসেছে দেখা যায়নি; প্রচুর টাকা এসে গেছে সে রকম হয়নি। আমরা মনে করি, আবার বিবেচনা করে এটাকে তুলে দেবেন।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশটিআইবিও। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, কালো টাকাকে সাদা করার এমন সুযোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে যেন সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সহজ করে বললে, সরকার দায়মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রকারান্তরে নাগরিককে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। দুর্নীতিকে লাইসেন্স দেওয়ার এই প্রক্রিয়া চিরতরে বন্ধ হবে, এটাই প্রত্যাশিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ ৫ রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধস্কুটির পেছনে ট্রাকের ধাক্কা প্রাণ গেল তরুণ-তরুণীর