বাজেটে কিছু বাড়তি সুবিধা চায় বারভিডা

পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের গাড়ির বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীরা আসন্ন বাজেটে কিছু বাড়তি সুবিধা চেয়েছেন। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি বাড়াতে সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। এ গাড়ির ব্যবহার বাড়লে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব বিষয় তুলে ধরে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এটির ওপর থেকে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানান গাড়ি ব্যবসায়ীরা। একাধিক গাড়ি ব্যবসায়ী করোনাকালে নিজেদের দুর্দশা তুলে ধরে বলেন, আসন্ন বাজেটে যদি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের দিকে সুনজর দেয়া না হয় তাহলে দেশের মোটর গাড়ির অন্যতম যোগানদাতা এ খাতটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন গাড়ি আমদানিতে বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলেন, এতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা চরম অসম প্রতিযোগিতায় পড়েছে। ফলে পুরান গাড়ি আমদানি ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। বহু ব্যবসায়ী ক্রমাগত লোকসানে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
আমদানি হওয়া নতুন ও পুরনো গাড়ির ব্যবসায় ভারসাম্য আনতে ইয়েলো বুকে উল্লিখিত গড় মূল্য থেকে ডিলার কমিশন বাবদ ২০ শতাংশ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বারভিডা। তাছাড়া পুরনো গাড়ির মূল্যের ওপর অবচয়ের হারেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি, বর্তমানে যে হারে অবচয় প্রদান করে শুল্কমূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, সেটি ন্যায় সংগত নয়।
উৎপাদনের পরবর্তী বছর আমদানি হলে গাড়ির মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর ২০ শতাংশ, তৃতীয় বছর ৩০ শতাংশ, চতুর্থ বছর ৪০ শতাংশ ও পঞ্চম বছর ৪৫ শতাংশ হারে অবচয় নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বারভিডা। আর অবচয় সুবিধার জন্য বয়স গণনার ক্ষেত্রে চেসিস বুকে উল্লেখিত গাড়ি উৎপাদনের পরবর্তী বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রে সিসি ভেদে সম্পূরক শুল্কের পুনর্বিন্যাস দাবি করেছে বারভিডা।সংগঠনটি ১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ২০০১ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ, ২৫০১ থেকে ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ, ৩৫০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ১০০ শতাংশ, ৪০০০ সিসির ঊর্ধে ১৫০ শতাংশ এবং ১৮০০ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণের দাবি জানায়। এ ছাড়া ফসিল ফুয়েলে চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে ১৬০০ সিসি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ, ১৬০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ, ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত ১০০ শতাংশ, ৩০০১ থেকে ৪০০০সিসি পর্যন্ত ১৫০ শতাংশ, ৪০০০ সিসির ঊর্ধে ২০০ শতাংশ এবং মাইক্রোবাসে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ২০শতাংশ ও ২০০১ সিসির ঊর্ধে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি করা হয়।
জাপানি বাস আমদানির পথ সুগম করতে শুল্ক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে বারভিডা। তারা বলছে, শুল্ক ন্যুনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনলে সাশ্রয়ী মূল্যে অত্যাধুনিক জাপানি বাস আমদানির পথ সুগম হবে। তাতে কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
এ ছাড়া ডাম্প ট্রাক, ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যালস, মিঙচার লরি, ক্রেন লরি ইত্যাদি আমদানিতেও শুল্কহার ১ শতাংশ করার প্রস্তাব বারভিডার।তাঁরা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে এসব মোটরযানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকার শুল্ক সুবিধা দিলে এসব গাড়ি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও বারভিডার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেশে মোটরযান সেক্টর বিনির্মাণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ভূমিকা অনেক। এখনো জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সাথে পৃথিবীর অনেক দেশের নতুন গাড়িরও তুলনা হয় না। শুধু প্রাইভেট কার নয়, দেশের গণপরিবহন, কৃষি ও অগ্নিনির্বাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ভূমিকা কতটুকু রাখা সম্ভব হবে তা নির্ভর করবে সরকারের উপর।
তিনি বলেন,জাপান জলবায়ূ পরিবর্তন ও উষ্ণতা রোধে কার্বন নির্গমন হ্রাসের অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে তেল চালিত গাড়ি উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিবর্তে জাপানসহ পৃথিবীর অন্যান্য মোটর গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যাপকভাবে হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এজাতীয় গাড়ি উৎপাদন ও ব্যবহার উৎসাহিত করতে ভূর্তকি দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে আনা শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়, ধরিত্রী বাঁচাতে, জনকল্যাণে আসছে বাজেটে সরকারের এ সংক্রান্ত প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিফলন জরুরি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কেবল কর আদায়ী প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। তাদের মানবিক দায়িত্বও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাচাংয়ে ঝুলছে ইয়েলো বার্ড ও ব্ল্যাকবেবি
পরবর্তী নিবন্ধবরকলে ইউএনওর স্পিডবোটের ধাক্কায় প্রাণ গেল তরুণের