বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সাময়িকভাবে সীমিত সময়ের জন্য সরকার ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সাময়িকভাবে সীমিত সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ আমদানির অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আমদানিকারকদের আমদানির শর্তাদি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
আসলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, বাজার পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সাধারণ মানুষ কোনোরকম সফলতা প্রত্যক্ষ করছে না। বরং বাজারে নতুন করে অসাধুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘ভোক্তার পকেট কাটতে অসাধু চক্রটি পুরোনো মোড়কে নতুন করে কারসাজি করছে। এতে প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারিতে ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করছে অসাধুরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বেড়েছে। ডিমের বাজারে তো রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। কারসাজি করে গত ২০ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে ২৮০ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে অসাধুরা। মুরগি আর মাছের দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। চালের রেকর্ড ফলন হলেও সিন্ডিকেটের চালবাজিতে মূল্য বাড়ছেই। এছাড়া সবজির বাজারের চিত্রও সন্তোষজনক নয়। কেজিপ্রতি চারশ টাকার নিচে তো কাঁচামরিচ মিলছেই না, কোনো সবজিই একশ টাকার নিচে নেই। এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামেও হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজারে গিয়ে কোনটা কিনবেন আর কোনটা কিনবেন না, এই ভেবে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা।’ বলা যায়, বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। নতুন করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। মানুষ চায় দ্রুত কিছু পরিবর্তন আসুক।
ক্রেতাসাধারণের অভিমত, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা। তাঁরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক দিন দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারো সেই একই চিত্র। সরকার বদলালেও এখনও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, দর বাড়ার ব্যাপারে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে একপক্ষ দোষ চাপাচ্ছেন আরেক পক্ষের ওপর। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর নির্ধারণের আগে সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেনি। উৎপাদন না বাড়িয়ে দর নির্ধারণ করলে তা বাস্তবায়ন হবে না। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, যে কারণে বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে তারা বিক্রি করতে পারছেন না।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ। এরপরও যদি দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে, তারা নিরুপায়। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকার অপেক্ষাকৃত কম দামে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে পারে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাজার তদারক করতে হবে, যাতে কেউ কারসাজির সুযোগ না পান।’ বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া এবং সেটি কার্যকর না হওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। বিগত সরকারও দাম বেড়ে গেলে কিছু পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু বাজারে তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বড় বড় সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত উপদেষ্টারা যদি বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো ছোট্ট বিষয়টির প্রতি একটু নজর দিতেন, তাহলে সীমিত আয়ের মানুষেরা একটু স্বস্তি পেতেন।
মূল কথা হলো, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবৈধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। মজুতদার–মুনাফাখোর ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। সারাদেশে পর্যাপ্ত ন্যায্যমূল্যের দোকান ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।