বাজারে প্রতিকেজি লবণ ৪০-৪৫ টাকা, মাঠ পর্যায়ে দাম মাত্র ৮ টাকা

ন্যায্যমূল্য দাবি কক্সবাজারের লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

মৌসুমের শুরুতেই মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্য লবণ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম এখন সর্বোচ্চ ৮ টাকা। অথচ চাষিদের প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১৫ টাকা করে। দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস করার জন্য লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

তারা বলেন, দেশে একমাত্র কক্সবাজার জেলাতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ লবণই কক্সবাজারে উৎপাদিত হয়। কক্সবাজার জেলার রামু ছাড়া বাকি ৮ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় নিম্ন ভূমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লবণের চাষ হয়ে থাকে। সাধারণত ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে সময়ের পরিধি বাড়ে কমে। তবে গত ২/৩ মৌসুম ধরে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম মোটামুটি ভাল থাকায় এ মৌসুমেও লবণ চাষিরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে আগাম লবণ চাষে মাঠে নামে। ফলে গত মৌসুমের এ সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দেড়গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

লবণ চাষিরা বলেন, ২০২২২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন, অথচ আগের মৌসুমে অর্থাৎ ২০২১২২ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। এরপর গত মৌসুমে বা ২০২৩২৪ মৌসুমে ৬৩ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। আর এ মৌসুমেও আগের রেকর্ড ভঙ্গ করার আশা নিয়ে আগাম লবণ চাষে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। ফলে গত মৌসুমের এ সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমের এ সময় পর্যন্ত প্রায় দেড়গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। লবণ চাষিরা বলেন, লবণ মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট দেশে লবণ উৎপাদন কমানোর জন্য চাষিদের উপর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করেছে। যাতে চাষিরা মৌসুমের শুরুতেই লবণ চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং লবণ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়। এরই অংশ হিসেবে লবণ মৌসুমের শুরুতেই লবণ মিল মালিকরা বস্তা প্রতি (প্রতি বস্তা ৮০ কেজি) ১৪শ টাকা থেকে দফায় দফায় কমাতে কমাতে এখন ৬৮০ টাকা থেকে ৭শ টাকায় এসে ঠেকেছে। আবার চাষিদের কাছ থেকে প্রতি বস্তায় ৮০ কেজির পরিবর্তে ৯০ থেকে ৯৫ কেজি লবণ নেওয়া হচ্ছে।

নিকট অতীতে মাঠ পর্যায়ে লবণের এমন দরপতন হয়নি উল্লেখ করে লবণ চাষিরা আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কম হলেও বাজারে প্যাকেটজাত লবণের মূল্য কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্য লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। লবণ চাষিরা দাবি করেন, বর্তমানে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে পলিথিন, জ্বালানি তেল ও শ্রমসহ প্রায় ১৫ টাকা খরচ হয়। অথচ মাঠ পর্যায়ে লবণ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ টাকা দরে। এর ফলে লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। অথচ এ স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষেত্র থেকে সরকার প্রায় ৫শ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে।

লবণ চাষিরা দেশের লবণ শিল্পকে রক্ষায় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুছের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় দেশীয় লবণ শিল্পটি আবারও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া। এ সময় জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মকছুদ মিয়া, সদস্য জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, সেলিম উল্লাহ, আনিসুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধষড়যন্ত্র থেমে নেই : তারেক রহমান
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬