চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা বাজারে আসতে শুরু করেছে। জুলাই মাসের শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পেয়ারা বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। পেয়ারা পুরোদমে বাজারে আসতে আরো ১ মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রতি মৌসুমে উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বিপুল পরিমাণে রসালো ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই কাঞ্চন পেয়ারা উৎপাদিত হয়। উপজেলার কাঞ্চননগর এলাকায় সর্বাধিক পেয়ারা চাষ হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা কাঞ্চন পেয়ারা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
স্থানীয় পেয়ারা বাগানিরা জানান, কাঞ্চননগর ছাড়াও উপজেলার ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, এলাহাবাদ, দোহাজারী, জঙ্গল জামিজুরীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর উৎপাদন হয় এই পেয়ারা। প্রতি মৌসুমে চন্দনাইশের এসব পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার বাগানে পেয়ারা চাষ করা হয়। কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই পেয়ারা চাষ হয় বলে এখানকার পেয়ারাকে অর্গানিক পেয়ারা হিসেবেও ধরে নেয়া যায়। জানা যায়, এখন অল্প পরিমাণ পেয়ারা বাজারে আসলেও পুরোদমে পেয়ারা বাজারে আসতে আরো ১ মাসের মতো সময় লাগবে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা সাইজে বড়, দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় সারাদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা পাইকাররা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন।
মৌসুমের শুরুতে আসা পেয়ারা একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন পেয়ারা প্রকারভেদে বর্তমানে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়। প্রতি মৌসুমে এ অঞ্চলের শত শত বেকার যুবক পেয়ারার পুটলি নিয়ে চট্টগ্রাম–কঙবাজার জাতীয় মহাসড়কের বিজিসি ট্রাস্ট, রওশনহাট, বাদামতল, খানহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট, বাগিচাহাট, দেওয়ানহাট ও দোহাজারী পৌরসদর পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করেন।
চাষিরা জানান, প্রতি মৌসুমে এ অঞ্চলে শত কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন হলেও পেয়ারা বিক্রির জন্য উপজেলার কোথাও নেই নির্দিষ্ট কোন স্থান। ফলে পেয়ারা চাষিরা চট্টগ্রাম–কঙবাজার জাতীয় মহাসড়কের পাশে বসেই অস্থায়ীভাবে বিক্রি করে এসব পেয়ারা। বিশেষ করে উপজেলার কাঞ্চননগর, কাঞ্চননগর রেলস্টেশন, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, খানহাট, গাছবাড়ীয়া কলেজ গেইট, বাদামতল, বাগিচাহাট, দোহাজারীতে পেয়ারার অস্থায়ী বাজার বসে। মৌসুমে মহাসড়কে পেয়ারার বাজার বসায় বিজিসি ট্রাস্ট ও রওশনহাট এলাকায় তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। তাছাড়া এ অঞ্চলে পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বাগান থেকে পেয়ারা ছিড়ে আনার পর দিনেই বিক্রি করে দিতে হয়। এতে অনেক সময় বাগানিরা লাভবান হয় আবার লোকসানেও পড়েন।
উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চাপাছড়ি এলাকার পেয়ারা বাগান মালিক মো. আজম উদ্দিন জানান, এখানকার পেয়ারা সু–স্বাদু ও পুষ্টিমান হওয়ায় সারাদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কোনো ধরনের যত্ন ছাড়াই পেয়ারা গাছে প্রচুর ফলন আসে। এতে তেমন কীটনাশকও দিতে হয় না। পেয়ারা চাষের সাথে জড়িতদের আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং সুদমুক্ত ঋণদানের ব্যবস্থা করা হলে পেয়ারা চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।