বাজারে অস্থিরতার শঙ্কা

ভোগ্যপণ্য নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

ভারত চালসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ কিংবা রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার মতো যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার এবং এর জের ধরে বাংলাদেশের বাজারকেও অস্থির করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও শুক্রবার ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিত জি২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রীদের সভার আগে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সাথে বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপণ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাসস জানিয়েছে, টিপু মুনশি সম্প্রতি পেঁয়াজের ওপর শতকরা ৪০ ভাগ রপ্তানি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দামের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে ওই বৈঠকে উল্লেখ করেন। ভারতীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন প্রতিকূল আবহাওয়াসহ কিছু কারণে ভারতে উৎপাদন কম হয়েছে সেজন্য তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে তিনি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেছেন দ্রুত ভারত এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। খবর বিবিসি বাংলার।

পেঁয়াজ ছাড়াও চালের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছে ভারত। এছাড়া চিনি রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে দেশটি। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি। পেঁয়াজ, চাল ও চিনির বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে সহসা খুব একটা হবে না। কারণ এসব পণ্যের যথেষ্ট মজুদ এখনো বাংলাদেশের আছে।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ভারত তাদের নির্বাচনকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারকে অস্থির করে দিচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। ভারতের সিদ্ধান্তকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশে যারা এসব পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা সুযোগ নেবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এদিকে চালে শুল্ক আরোপের বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মজুমদার ট্রেডার্সের মালিক চিত্ত মজুমদার বলেন, চাল নিয়ে ভারতীয় সিদ্ধান্তের কোনো নেতিবাচক প্রভাব এখনই পড়ার সম্ভাবনা নেই।

পেঁয়াজেও বাড়তি শুল্ক : পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল থাকবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে গড়ে প্রতিদিন দুইশটি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে প্রতিদিন আসা পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো। কিন্তু তারপরও পেঁয়াজের দাম কমানো যায় না চাহিদার কারণে। তাছাড়া উৎপাদন বাড়লেও বাংলাদেশে পাবনা ছাড়া আর কোথাও পেঁয়াজ মজুদ করে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে অন্য জায়গার কৃষকদের মৌসুমের মধ্যেই পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলতে হয়।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। মোট চাহিদা পূরণ হতে ৩০ শতাংশের মতো পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টনের মতো। আরও দশ লাখ টন আমদানির অনুমতি পেয়েছে আমদানিকারকরা।

হিলি স্থলবন্দর আমদানিরপ্তানিকারক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন উর রশিদ বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। আমদানি হলে দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ আমদানি হলে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত হয়। না হলে তো দাম বাড়বেই। ভারতের সিদ্ধান্তের কারণে ন্যূনতম ১৫০ ডলারের এলসিতে এখন দিতে হবে ৩২৫ ডলার। ফলে দাম বেড়ে যাবে বাজারে। তবে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করায় ভারতের স্থানীয় বাজারে দাম অনেক কমলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে চিনিতে : অক্টোবর থেকে চিনি রপ্তানিও ভারত বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স। বাংলাদেশ বেশিরভাগ পরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করে। তারপরও ভারতের সিদ্ধান্তের প্রভাব আন্তর্জাতিক বাজারে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত মৌসুমে ৫৮ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ও ৫৫ লাখ টন পরিশোধিত চিনি রপ্তানি করেছে ভারত। এখন দেশটি রপ্তানি বন্ধ করলে আমদানিকারক দেশগুলো বিকল্প উৎস খুঁজবে। তাতে দাম অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। ভারত থেকে অপরিশোধিত চিনি বেশি আমদানি করে বাংলাদেশ। এমনিতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত এক বছরে চিনি আমদানিতে খরচ এক চতুর্থাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে দেড় লাখ টনের বেশি।

ভারত কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে : এসব পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে বড় সরবরাহকারী। সে কারণে বাংলাদেশ সরাসরি আমদানি না করলেও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব পড়বে এবং দাম বেড়ে যাবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বাজারেও এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে বলে বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের ধারণা।

জাহিদ হোসেন বলেন, সামনে ভারতের নির্বাচন, তাই দেশটির সরকার স্থানীয় বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে। কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশে এসব ব্যবসা যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা এমন পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে যৌক্তিকতা না থাকলেও দাম অনেক বাড়িয়ে দেন।

অবশ্য ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত উৎপাদন ভারতে না হওয়াটাও শুল্ক বাড়ানো বা রপ্তানি বন্ধের মতো সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার অনেক দেশে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামনে এর প্রভাব বিশ্ব বাজারে পড়ার আশঙ্কা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের তালা
পরবর্তী নিবন্ধএবার সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ভারতের ২০% শুল্কারোপ