আমি একটা জিনিস বুঝি না। বাচ্চা বড় হয়েছে বলে মাকে কেন বুড়ি লুক নিতে হবে। মাকে কেন রঙহীন কাপড় পরতে হবে? মাকে কেন অনিচ্ছাসত্ত্বেও চেহারায় মুরুব্বীয়ানা ভাব আনতে হবে। কেনো? সন্তানদের সাথে যদি মায়েরাও রঙিন থাকে তাহলে কী সমস্যা? একদল উত্তর দিবে মায়েদের একটা রেস্পেক্ট আছে না? মায়েদের সবকিছু মানায় না। তাহলে সন্তান বড় হলে মা কে বুড়া হতে হবে কেনো? মহা মুসিবত, এই যে সন্তানদের জন্য সংসারের জন্য এত স্যাক্রিফাইস একজন মা করলো তাতেও পোষাচ্ছে না? রেস্পেক্ট পাবার জন্য সাজা ছেড়ে দিতে হবে? আয়নাতে মুখ দেখতে পারবো না, ফিকে কাপড় পরতে হবে। কিশোরীর মত উচ্ছ্বাস দেখাতে ইচ্ছা হলে, যুবতীর মত সাজতে ইচ্ছা হলে, প্রাণ খুলে হাসতে ইচ্ছা হলেও, শুধু মা বলে চুপ থাকতে হবে? কেনো!
তারও নিজেকে ভালোবাসার, নিজের পছন্দে সাজার অধিকার আছে। শাড়ি পরে নিজেকে দেখার অধিকার আছে। কী বলেন? Aging gracefullyবলে একটা phrase আছে ইংরেজিতে যার অর্থ হল সুন্দরভাবে বয়সকে বরণ করা। যে কোনো মানুষ চাইলেই বয়স হবার ব্যাপারটা এনজয় করতে পারে। কারণ বয়স হওয়াটা একটা ন্যাচারাল প্রসেস। এতে কারো হাত নেই। কিন্তু এই সময়টাকে সুন্দর বানানো সম্পূর্ণ আমাদের হাতে। নিজেকে সুন্দরভাবে সাজানো আমার একটা অভিরুচি আছে। সুন্দর উপস্থাপন আমার আমাকে ভালো রাখার। আমরা যদি আমাদের মায়েদের ভালোবাসি তাহলে তাকে জিমে যেতে বলব, নিজের চেহারার যত্ন নিতে বলব, হেলদি খেতে বলব। কখনওই মনে করিয়ে দিব না– তুমি শেষ হয়ে যাচ্ছ। কখনো বলবো না মা তুমি বার্ধ্যক্যে অবতারণ করছো। একজন ২০ বছর বয়সী পুত্রের মা হিসেবে আমি বুঝি, মা হলেই কেউ বড় হয় না, সংসারের সব দায়িত্ব নিলেও কেউ মানসিকভাবে বৃদ্ধ হয় না। এমনকি শরীর পুরানো হলেও মানুষ বৃদ্ধ হয় না। মানুষের বয়স হয় তখনই যখন সবাই তাকে বয়স্ক হিসেবে ট্রিট করতে থাকে। বয়স্ক বলে বার বার আঘাত করে। সমপ্রতি কলকাতায় ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলি। একটা বিয়ে বাড়িতে এক পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রমহিলা লাল রঙ এর লিপস্টিক পরে যাওয়ায় তার আত্মীয়স্বজনেরা তাকে ভীষণভাবে অপমান করেন। এই ঘটনা জানার পর তার পঁচিশ বছর বয়সী পুত্র সেই আত্মীয়স্বজনদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। মাকেslut-shaming করার প্রতিবাদে সে নিজে লাল রঙের লিপস্টিক পরে ছবি আপলোড করে রিলেটিভদের উদ্দেশ্যে লিখেন ‘Get Well Soon’. এই দেখার পর আমার মনে হল সত্যিই তো, মায়েরা লাল লিপস্টিক দিতে পারবে না এটা কোথায় লেখা আছে? বরং লাল রঙ এর মত দুঃসাহসিক রঙ পরার সাহস যদি থাকে কোনো মায়ের তাহলে সন্তানের তাকে নিয়ে লজ্জা না গর্ব হওয়া উচিত…। তাই ষlet’s get well soon together শুধু মা বলেই কিছু চাপিয়ে দেয়ার আগে ভাবি– মা হলেও কারো সাজতে ভালো লাগে, মা হলেও হাসতে ভালো লাগে, মায়েরও আড্ডা দিতে ইচ্ছা করে, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ইচ্ছা করে। মা হলেও পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে, মা হলেও স্বাধীনভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে। মা হলেই কেউ বাঁচা বন্ধ করে দেয় না, মা বলেই কেউ মরে যায় না। মা বলেই বেঁচে থাকে, তাই মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।