বাঙালি ও পিঠা এক ও অভিন্ন, যেন একসুতোই বাঁধা। শীতের ও পৌষ পার্বণের সময় বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম পড়ত। পৌষের নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে, ভোরে গাছির হাতে খেজুরের রস, ঢেকিতে নতুন চালের গুড়ায় হরেক রকমের পিঠায় গ্রামাঞ্চলে এ যেন নবান্নের পিঠা উৎসব। শুধু শীত নয়, সারা বছরই বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা যেন বাংলার চিরায়ত শাশ্বত রূপ। ভাপা পিঠা, চিতই, ছিটকা, খোলাজালি, ছুটকি, বিনিভাত, মধু ভাত, ছাইন্যপিঠা, পাটি সাপটা, পুলি, মচমচা পুলি, পাক্কন, ছাঁচ পাক্কন, নারকেল নাড়ু, নকশি, শিলভাজা, তালপিঠা, পোয়া, জালাপিঠা, বিন্নিপিঠা, গুরাপিঠা হরেক রকম মজাদার সুস্বাদু পিঠা ছিল বাংলার ঘরে ঘরে। পিঠা বানানো নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় যেন নতুন উল্লাস উদ্দীপনায় গ্রামীণ উৎসব বয়ে যেত।
আজ কালের বিবর্তনে বাংলার সেই চিরায়ত রূপ ঐতিহ্য ও শেকড়ের চেহারা বদলে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার সেইসব পিঠাপুলি। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সাথে পিঠাপুলির পরিচয়ও নেই আবার খেতেও তারা তেমন আগ্রহী নয়। শহরাঞ্চলে ঘরে বানানোর পিঠা এখন রাস্তার অলিগলি মোড়ে। স্বাদগন্ধে সেই তৃপ্তি বা মজা না পেলেও মানুষ কিনে খাচ্ছেন এবং বাসায়ও নিয়ে যাচ্ছেন। শহরের মহিলারা সেই নানী–দাদীর মত পিঠা বানানো জানা এবং ঝক্কিঝামেলা নিতে পারছেন না বলেই ক্রমাগতভাবে পথের পিঠা ব্যবসাও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এভাবে চলতে থাকলে পৌষ পার্বণের সেই পিঠা হারিয়ে যাবে।