ঈদে অতিথি আপ্যায়নে এখনো সেমাইয়ের বিকল্প নেই। তাই বাসায় আর দশটা আইটেমের সাথে সেমাইয়ের উপস্থিতি জানান দেয়, ঈদ এসে গেছে। তবে সময়ের সাথে সেমাইয়ের ধরনও রূপান্তরিত হয়েছে। এছাড়া মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় অতিথি আপ্যায়নে বাংলা সেমাই কিংবা লাল সেমাইয়ের কদর ছিল বেশি। সেই জায়গা এখন অনেকটা দখল করে নিয়েছে লাচ্ছা সেমাই। বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানি বাহারি মোড়কে বাজারজাত করছে এই সেমাই।
ঈদে সেমাইয়ের কদর ফুরিয়ে না গেলেও ভালো নেই বলছেন সেমাই ব্যবসায়ীরা। সেমাই উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবার মুখে একটাই কথা এ বছর সেমাইয়ের বাজার মন্দা। বেচাবিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। অন্যান্য বছর এ সময়ে পাইকারি দোকানে সেমাই কিনতে লাইন পড়ে যেত। এ বছর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকাসহ নানা সমস্যায় পড়ে খুচরা বিক্রেতা পাইকারদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
গতকাল চাক্তাই-রাজাখালীর কয়েকটি সেমাইয়ের কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৫ কেজির টুকরি লাল সেমাইয়ের দাম পড়ছে ৯৭০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। গত তিন মাস আগের তুলনায় যা ৩০০ টাকা পর্যন্ত কম। কারখানা মালিকরা জানিয়েছেন, আগে যেখানে কারখানাগুলো দৈনিক গড়ে ১শ মণ করে উৎপাদন করত, এখন সেটি কমে এসেছে মাত্র ২০-২৫ মণে। অন্যদিকে ময়দার দামও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ৩৫ কেজির টুকরি খোলা লাচ্ছা সেমাইয়ে দাম পড়ছে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনফুল, কিশোয়ান ও ফুলকলির মতো ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাইয়ের কেজি পড়ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ওয়েল ফুড ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাইয়ের মানভেদে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত।
রাজাখালীর মেসার্স সানোয়ারা সেমাই ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আজগর আজাদীকে বলেন, করোনাকালীন লকডাউনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। যে পরিমাণ সেমাই উৎপাদন করেছি, তা এখনো বিক্রি করতে পারিনি। গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর অনেকে গরিব মানুষকে ত্রাণ হিসেবে সেমাই দিয়েছেন। এ বছর সে ধরনের তৎপরতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
কাজির দেউড়ির ভান্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজাদীকে বলেন, অন্যান্য বছর ১৫ রমজানের পর থেকে সেমাই টুকিটাকি বিক্রি হতো। এ বছর সেমাই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। তবে এটিও ঠিক, মানুষ এখন কিছুটা মার্কেটমুখী। তবে আগামী ২০ রমজানের পর আশা করি বেচাবিক্রি বাড়বে।
তারেক নেওয়াজ পলাশ নামের একজন ভোক্তা জানান, লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি কম কিংবা নেই বললেও কোনো পণ্য কিন্তু কম দামে বিক্রি করছেন না। বরং আগের চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি করছেন।










