স্বাধীনতা, ব্যুৎপত্তিগত অর্থে এটির মানে হলো স্ব–অধীনতা বা নিজের স্বাধীনতা। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছামত আচার–আচরণের সুবিধা। আবার স্বাধীনতা বলতে নিয়ন্ত্রণবিহীনতাকে বোঝায় না। কিন্তু স্ব–অধীন হওয়াটা কি এতই সহজ? না, ‘স্বাধীনতা’ এই একটি শব্দের জন্য সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাদের প্রাণের ভয় ত্যাগ করে যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। সেই মানুষগুলোর মন–প্রাণ সবই শুধু একটা জিনিসের অপেক্ষায় ছিল, স্বাধীনতার অপেক্ষায়। একটি পাঁচ বছরের বালক থেকে আশি বছরের বৃদ্ধও ভাবতেন, ‘আর কত অপেক্ষার পর স্বাধীনতা আমাদের হবে? এই বাঙালি জাতি কবে স্বাধীন হবে?’ কিন্তু চাওয়ার সাথে সাথেই কি ঝাঁপিয়ে পড়া যায়? এমন সময় তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে জাতির পিতা ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ কারণেই তাদের সাহস পাহাড়চূড়ায় উঠে যায় আর সেই সাহস এবং মনোবলের জোরেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই পরাধীনতার শিকল ছিড়ে চূর্ণ–বিচূর্ণ করে দেওয়ার জন্য কেউ বন্দুক হাতে, কেউ রামদা হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর উপরে। তবে শুধু অস্ত্র দিয়েই যে যুদ্ধ করেছে, তা নয়; গৃহিণীরা তাদের সাধ্যমতো যোদ্ধাদের খিদে মিটিয়েছেন, শিল্পীরা তাদের গানের মাধ্যমে যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন, চিকিৎসক আহত যোদ্ধাদের তার চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেছেন। সবাই যে যার জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, তাহলে এখানে এতো কঠিনের কী আছে? তাদের কাছে ছিল উন্নত মানের অস্ত্র, ছিল অসংখ্য সুযোগ–সুবিধা। কিন্তু আমাদের? আমাদের এতো অস্ত্র –শস্ত্র ছিল না, আমাদের ছিল দৃঢ় মনোবল। তাই তাদের এতো অস্ত্র, এতো সুযোগ–সুবিধা সবকিছুই মাথা নত করেছিল আমাদের এই দৃঢ় মনোবলের সামনে। বাংলার দামালদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ আমাদের রক্তে আছে বাংলা মায়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও দেশপ্রেম। তাইতো আজ স্বাধীনতা বাংলার ও বাঙালির।