এটি সর্বজনবিদিত যে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক অত্যন্ত নিগূঢ়–তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক এখন এতটা মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে; যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে প্রতিভাত। বিশেষ করে উন্নয়ন অগ্রগতিতে বিশ্বস্বীকৃত বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা–মেধা–দৃঢ়চেতা নেতৃত্বে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের উর্ধ্বে সমাসীন। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কতিপয় কর্তৃত্ব–আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বেড়াজালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে উক্ত রাষ্ট্রসমূহের কদর্য ভূমিকা নিয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের অসন্তুষ্টির বার্তা দৃশ্যমান হয়েছে। যেটি বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের অটুট বন্ধনকে আরো অধিকমাত্রায় মর্যাদাসীন করবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত কূটনৈতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু যেভাবে বর্তমান সরকারকে অস্থির করার জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, তা প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং আমেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না বলে মনে করে ভারত।’
এটি অবশ্যই স্মরণযোগ্য, ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন মান্যবর প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সরকারের কূটনৈতিক–মানবিক সহায়তা, ভারতের সকল নাগরিকের অকুন্ঠ সমর্থন ব্যতিরেকে মহাকালের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা দুরূহ ব্যাপার ছিল। মুক্তির এই নান্দনিক প্রেক্ষাপটে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নিরলস জ্ঞানাঙ্কুর পরিশ্রম বিশ্ব ইতিহাসের বর্ণালী অধ্যায়ে প্রজ্বলিত। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রত্যক্ষ পক্ষাবলম্বন মুজিবনগর সরকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অফুরন্ত অনুপ্রেরণায় শুধু ঋদ্ধ করেননি; পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে চৌকস অভিযান পরিচালনায় দক্ষ–প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীর সকল রসদ যুগিয়ে বাঙালি জাতিকে চিরঋণী করে রেখেছে। ধারাবাহিকতায় অতীতে ভারতের প্রত্যেক সরকার ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সুসম্পর্ক অব্যাহতভাবে অধিকমাত্রায় সুদৃঢ় হচ্ছে। ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁর ভাষণে বলেন, ‘বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের শক্তিতে আবদ্ধ বাংলাদেশ–ভারত। গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, যা দেশের নাগরিকদের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি করেছে। ভৌগোলিক সুবিধা ও বাংলাদেশের চমৎকার অর্থনৈতিক সাফল্য সমগ্র উপ–অঞ্চল ও বিশ্বকে উপকৃত করতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে; ঘনিষ্ঠ উপ–আঞ্চলিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগ স্বল্প সময়ের মধ্যে সোনার বাংলা গঠনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।’
মূলতঃ স্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপাক্ষীক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৫ সালে এ বিষয়ে স্বাক্ষর হওয়া নতুন চুক্তির আওতায় রয়েছে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হাটসহ আরো কিছু বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ–ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং সহযোগিতার নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। উক্ত সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব–শান্তি–সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু গঙ্গা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নদীর সুষম পানি বন্টন ও ছিটমহল হস্তান্তরের প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ১৯৭৪ সালে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল ও সীমানা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় কিছু অতিরিক্ত ভূমি ছেড়ে দেয়ার জন্য তিনি ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ ও শক্তিশালী ভূমিকার জন্য ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে ফারক্কা বাঁধসংক্রান্ত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে ভারত ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করবে এবং বাংলাদেশ পাবে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি। যেটির উপর ভিত্তি করে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ফারাক্কার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করে। সরকারি বা নীতিগত পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকতা বজায় রাখলেও; অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নানা টানাপোড়েন পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭৭ সালে ভারতে কংগ্রেস সরকারের পতন হলে দুই দেশের সম্পর্কের কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলে ১৯৭৯ সালে গঙ্গা নদীর স্বল্পমেয়াদী পানিবন্টন চুক্তি এবং ১৯৮০ সালে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতে ১৯৮০ সালে পুনরায় কংগ্রেস সরকার এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও এ পার্থক্য বিরাজিত থাকে। ঐ সময়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে জোরদার করার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় সার্ক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শাসন প্রত্যাবর্তনে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকারের বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও; নিরাপত্তা বা অন্যান্য বিষয়ে ধারাবাহিকতার বাইরে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। ১৯৯৬–২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয় দীর্ঘসময় ধরে অমীমাংসিত গঙ্গা পানি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’ সম্পাদনে ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছাড়া তা সম্ভব হতো না বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট সরকারের জয়লাভের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে নবতর অধ্যায় রচিত হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। দুই দেশ দ্বিপক্ষীয়–আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বহু বিষয়ে মতৈক্য পোষণের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবিরোধী এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ–ভারত একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। উল্লেখ্য সফরে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখন্ডের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রানজিট সুবিধা, ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে সম্মত, বাংলাদেশ কর্তৃক ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং ভারত কর্তৃক এক মিলিয়ন ডলার ঋণদান বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের মেলবন্ধন সুদৃঢ় হয়। ২০১৪ সালে শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং শপথবাক্য পাঠের অনুষ্ঠানে অন্যতম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি বাংলাদেশ–ভারতের বন্ধুত্ব আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। ২০১৪ সালে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর করে সম্পর্ক উন্নয়নে ভিসা, বিদ্যুৎ, মৈত্রী এক্সপ্রেস, বাস চলাচলসহ ৬টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।
২০১৫ সালের জুনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিগুলোর মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ–বিষয়ক সমঝোতা, ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা, ৩ হাজার মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ, ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ রয়েছে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানব পাচার ও জাল মুদ্রা রোধ। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৬৮ বছরের স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধান দুই দেশের সম্পর্কের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। ২০১৮ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘বাংলাদেশ–ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের সরকার প্রধানদের এক ভার্চুয়ালি বৈঠকে জ্বালানি, সামাজিক উন্নয়ন, কৃষিসহ ৭টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমেও বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কে উচুমাত্রিকতার সেতুবন্ধন নির্মিত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় এই সফরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্ব–তাৎপর্যপূর্ণ। সফরকালীন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যু, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানিবন্টন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়। স্বাক্ষরিত হয় সাতটি সমঝোতা স্মারক। সমঝোতা স্মারকের মধ্যে ছিল– সুরমা ও কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার, ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে ভারতের ভোপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক, ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতী’র সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সমঝোতা, মহাকূন্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতা অন্যতম।
জাতির স্মরণে অবশ্যই প্রোথিত আছে যে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ শহীদ ভারতীয় সেনা পরিবারের সদস্যকে বাংলাদেশের সম্মাননা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ–যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সন্তানদের ‘মুজিব স্কলারশিপ’ প্রদান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী–স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী যৌথভাবে উদযাপন দুই দেশের সম্পর্ককে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দুই দেশের উন্নয়ন–নিরাপত্তায় অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে এ সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা–শ্রদ্ধা–সম্মান ও ভালোবাসায় গভীর থেকে গভীর হোক। যেকোন অশুভ–অন্ধকারের শক্তির চক্রান্ত–ষড়যন্ত্র দুই দেশের চির অটুট এই বন্ধনে চিড় ধরাতে না পারে সেদিকে রাষ্ট্র–সরকারসহ আপামর জনগণের মনোযোগ নিবিষ্ট করা একান্ত জরুরী। অতিসম্প্রতি চাঁদে ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান–৩’ এর সফল–নিরাপদ অবতরণ ভারতবাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সকল নাগরিকই একীভূত আনন্দ উল্লাসে উদ্দীপ্ত। বিরাজিত রাজনীতি–সংস্কৃতি–অর্থনীতি–শিল্প–বাণিজ্য–শিক্ষা ও সামাজিক সকল অসঙ্গতিগুলোকে পর্যাপ্ত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণে যথাযোগ্য মর্যাদায় যৌক্তিক সমাধান অবশ্যই সম্পর্ককে আকাশচুম্বী উচ্চতায় নিয়ে যাবে– নিঃসন্দেহে তা প্রত্যাশিত।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়