১৭ মে ২০২৩ বুধবার বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তাঁর ফিরে আসা বাংলাদেশের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আবির্ভাব । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরঘাতকরা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। শেখ হাসিনা তখন তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে তাঁরা খুনিদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দিতে, বাঙালি জাতির অস্তিত্ব্বকে বিপন্ন করতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা শুরু করে নানামুখী নীলনকশা। বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে কালো অমানিশা। বাংলাদেশের রাজনীতি তখন বিভ্রান্ত ও পথহারা। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত বাংলাদেশ–বিরোধী শক্তির নির্যাতন–নিগ্রহে জর্জরিত আওয়ামী লীগে তখন বিভাজন ও নেতৃত্ব–সংকটে।। জাতির এমন ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালের ১৪–১৬ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের ইডেন হোটেলে তিন দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। দেশমাতৃকারমুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরু দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করা হয়। জাতির পিতার কন্যার হাতে আওয়ামী লীগের মত বড় সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা ছিল এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ১৬ মে শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান। ১৭ মে বিকেলে কোলকাতা থেকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন আব্দুস সামাদ আজাদ ও এম কোরবান আলী। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা এই প্রথম এলেন। পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মমতাময়ী মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, আদরের ছোট তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই আর জীবিত নেই। ৩২ নং সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি এখন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। জেনারেল জিয়ার সরকার বাড়িটিতে তালা মেরে পুরো বাঙালি জাতিকে শৃঙ্খলিত করতে চেয়েছেন। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধুহত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
সেদিন আকাশে ছিল মেঘ, ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। প্রকৃতি যেন শোকের চাদর গায়ে মলিন বদনে শেখ হাসিনার জন্য প্রতীক্ষা করছিল। বিমান থেকে নামার পর শুরু হলো অঝোর ধারার বৃষ্টি যেন শেখ হাসিনার অশ্রু জল হয়ে ভরিয়ে দিল বাংলার প্রতিটি প্রান্তর। ৬৫–৭০ মাইল বেগের ঝড়ঝঞ্ঝা ও প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ তাকে স্বাগত জানায়। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। আকাশ–বাতাস প্রকম্পিত হয় ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে।। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটের পর বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি মাটি স্পর্শ করার আগেই হাজার হাজার উৎসাহী জনতা সকল নিয়ন্ত্রণের সীমা, নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে ফেলে। নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় অবশেষে তিনি নেমে আসেন; হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। লাখো লাখো মানুষ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়েছিল। গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যে বেরিয়ে আসেন সাদা রংয়ের ওপর কালো ডোরাকাটা তাঁতের মোটা শাড়ি পরা প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৪.৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা একটি ট্রাকে ওঠেন। এ সময় বজ্র নিনাদে জনতার স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছিল ঠিক এভাবেই ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব‘, ‘শেখ হাসিনা স্বাগতম শুভেচ্ছা‘ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু‘। বিমান থেকে নামার সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক যখন ফুলের মালা পরিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানান তখন তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেবল পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই তুলনীয়।
রাজধানী ঢাকা সেদিন মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচণ্ড ঝড়–বৃষ্টি উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ মানুষের মিছিলে ঢাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনতার স্রোত ছুটে এসেছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখতে। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জন মানুষের অরণ্যে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের গন্তব্য ছিল ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ–বাতাস। আবালবৃদ্ধ জনতা আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে উচ্চারণ করেছিলেন – ‘মাগো তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব’; ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, পিতৃ হত্যার বদলা নেব’। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’; ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে, লক্ষ ভাই বেঁচে আছে’; ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’; ‘ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’। ‘শেখ হাসিনা আসছে, জিয়ার গদি কাঁপছে’; ‘গদি ধরে দিব টান, জিয়া হবে খান খান’।
বিমানবন্দর থেকে নামার পর প্রায় দীর্ঘ তিন ঘণ্টাব্যাপী মানুষের অভিনন্দন গ্রহণ শেষে বনানী কবরস্থান হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সভামঞ্চে পৌঁছান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তখনও চারদিক অন্ধকার, মুষলধারে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণসংবর্ধনার মঞ্চে দাঁড়ালেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর কথা শোনার জন্য প্রচন্ড ঝড়–বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছিল কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষ।
ঝড়–বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরে বাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা–মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ–সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’
গণসংবর্ধনায় ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। শেখ হাসিনা বলেন, ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।’ জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্বজনদের রক্তে রাঙানো ৩২ নম্বর বাড়িতে মিলাদ পড়াতে চেয়েছিলেন। জিয়া সে অনুমতিও দেয়নি। বাধ্য হয়ে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে মিলাদের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল–জুলম, অত্যাচার কোনকিছুই তাঁকে তাঁর পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন, আবির্ভূত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আপন কর্মমহিমায় হয়ে উঠেছেন নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা; হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত প্রতীক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, বাঙালির আশা–আকাঙ্ক্ষার বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন–সারথী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পিছিয়ে পড়া দেশ–জাতি জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হিসেবে বিশ্বনন্দিত নেতা। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। মানবতার জননী, আত্মশক্তি সমৃদ্ধ সত্য সাধক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ক্লান্তিহীনভাবে তিনি বাংলার মানুষকে সাথে নিয়ে অকুতোভয় চিত্তে সংগ্রামে নেমেছেন। দীর্ঘ ৪১ বছরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য অবিকল্প রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে লড়াই করে আসছে। সে লড়াইয়ের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
জনগণের ভালবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থ বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি দেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। বাবার দেখানো পথের আদর্শ অনুসরণ করে সংগ্রামী দীপ্ত পথচলার জয়যাত্রার জয়রথে দ্যুতি ছড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্র বক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু–ইকোনমির নবদিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, সাবমেরিন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীতকরণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই প্রদান, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর–জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনেও সফল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার ঝুলিতেও জমেছে অনেক অর্জন। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনা অর্জিত আন্তর্জাতিক পদক ও পুরস্কারের সংখ্যা ৩৯টি।
তিনি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বিশ্বনেতার বাইরেও একজন অভিভাবক। অবসরে বই পড়েন, লেখালেখি করেন। জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষায় কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
নেতৃত্বের দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, অসীম সাহসিকতা ও আর্ত–মানবতার কল্যাণের ক্ষেত্রে মৌলিক অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। শোষক ও শোষিতের বিশ্বে তিনি একজন ব্যতিক্রমধর্মী এবং প্রকৃত তারকা নেতায় পরিণত করেছেন নিজেকে। বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই আগামী বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য একজন নেতা হয়ে উঠেছেন। বিশ্ব মানব কল্যাণের নানা মৌলিক ক্ষেত্রে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য ধ্রুবতারার মতো ভূমিকা রেখে চলেছেন।
‘‘রূপকল্প ২০২১’’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘‘রূপকল্প ২০৪১’’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত আধুনিক সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কই নন; তিনি তার সততা, যোগ্যতা ও কর্ম প্রচেষ্টায় আজ বিশ্বনেত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বে একজন অনুকরণীয় নেতৃত্বের আদর্শ। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনে তাঁর প্রতি অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
লেখক : উপাচার্য, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।