বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় ভিসা আরো সহজ হোক

সালাহউদ্দিন শাহরিয়ার চৌধুরী | শুক্রবার , ২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সাথে মাত্র দু’টি দেশের সীমান্ত রয়েছে একটি ভারত অন্যটি মায়ানমার। বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছুতেই ভারত এগিয়ে আছে, বিশেষ করে পর্যটন ও চিকিৎসা সেবায় তাছাড়া ভাষাসংস্কৃতি ও খাদ্যাবাসে আমাদের সাথে অনেক বিষয়ে ভারতের মিল থাকায় এবং ভারতের সাথে যাতায়াতের সুবিধার কারণে বিশেষ করে স্থল পথে যাওয়ার অনেকগুলো সীমান্ত থাকায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ মানুষ ভারতে যাওয়া আসা করে। বাংলাদেশের সাথে অনেকগুলো স্থল সীমান্ত থাকলেও প্রধানত ৪ থেকে ৫টি স্থল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে যাওয়া আসা করে তৎমধ্যে বেনাপোল সীমান্ত অন্যতম। তাছাড়া আখাউড়াআগরতলা, বাংলাবান্দা সীমান্ত, তামাবিল সীমান্ত, গেদে সীমান্ত ও বিমান পথে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে ভারতের বিভিন্ন জায়গার ভ্রমণ প্রত্যাশীরা যাতায়াত করেন।

আমরা প্রায়ই দেখি বিশেষ করে যখনই দু’পক্ষের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনও সভা হয় বা ভারতীয় দূতাবাসে যখন নতুন কোনও হাই কমিশনার যোগদান করেন তখনই তারা বলেন বাংলাদেশের সাথে ভারতের ভিসানীতি আরো সহজতর করা হবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আদৌ কি তা সহজ হচ্ছে? বর্তমানে পেশাগত কারণ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশ ভ্রমণে করেন তাদের অধিকাংশই ভারতে যান বিশেষ করে যারা মধ্যবিত্ত তাদের অধিকাংশই পর্যটন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে যাওয়া আসা করেন।

একটা সময় সরাসরি ভিসা ফরম পূরণ করে ভারতীয় দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিলে একদিন বা দু’দিন পর ভিসাসহ বা ভিসাহীন পাসপোর্টটি ফেরৎ পাওয়া যেতো। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়, প্রথম দিকে সেটিও সাবমিট করে পরদিন বা এক সপ্তাহের মধ্যে জমা দেওয়া যেতো কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো ভিসা প্রত্যাশীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন অনলাইনে প্রাপ্ত সময় অনুযায়ী ভিসা সেন্টার কর্তৃক প্রাপ্ত নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়ে ভিসা ফরম জমা দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনে ভিসা ফরম জমা দেওয়ার সিডিউল পেতেই চলে যায় ১৫ থেকে ২০ দিন কোনও কোনও সময় এক মাসেরও অধিক সময়ে পরেও সিডিউল পাওয়া যায় না, শুধু কি তাই সেই ভিসা ফরম জমা দেওয়ার এক থেকে দেড় মাস পরে পাসপোর্টটি ফেরত দেওয়া হচ্ছে অনেক সময় আরো বেশি সময় লাগে বিশেষ করে চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে।

ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশান সেন্টার (IVAC) এর ওয়েবসাইট ivacbd.com এর মাধ্যমে ভারতীয় ভিসা প্রত্যাশীরা অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ করতে পারেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে সেটি পূরণ করে বলে অনেক বিষয় তারা অবগত থাকেন না। অনলাইনে ভারতীয় ভিসা ফরম পূরণেও এখন নতুন নতুন শর্ত সংযুক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন যারা ভিসা প্রত্যাশী তাদের জন্য প্রকৃত অর্থে এই ভিসা পূরণ করতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে আপনি ভারতে গেলে কোথায় অবস্থান করবেন তার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার এবং রেফারেন্স হিসেবে একজন ভারতীয় ব্যক্তির নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার বাধ্যতামূলক পূরণ করতে হবে। কিন্তু যে ব্যক্তিটি নতুন ভারতে যাবে সে কি করে হোটেলের নাম এবং রেফারেন্স হিসেবে ভারতীয় ব্যক্তির নাম সংযুক্ত করবে? সেতো ভারত বা কোনও ভারতীয় ব্যক্তিকে চিনেই না, তাছাড়া অপরিচিত একজন বিদেশী ব্যক্তিকে কেন কোন ভারতীয় ব্যক্তি তার নাম ব্যবহার করতে দেবে? তাই এই বিষয়গুলো ভিসা ফরমে লিপিবদ্ধ করতে অনেকেই দালালের শরণাপন্ন হয়ে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে এবং যার ফলে দালাল তার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। নিরাপত্তার খাতিরে বা যেকোনও কারণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেকোনও বিষয় বা শর্ত সংযুক্ত করতে পারে কিন্তু যে তথ্য পূরণ করতে কষ্টকর সে বিষয়ক তথ্য সংযুক্ত করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত।

তাছাড়া পাসপোর্টের সাথে বাধ্যতামূলক একটি ইউটিলিটি বিল জমা দিতে হচ্ছে কিন্তু বাসস্থান পরিবর্তনের কারণে সেই ইউটিলিটি বিল এর সাথে পাসপোর্ট এর ঠিকানার মিল না থাকলেও সেটিও গ্রহণ যোগ্য নয় বলে বিবেচিত হয়। অথচ একজন ভিসা প্রত্যাশীর ঠিকানা সমৃদ্ধ পাসপোর্ট এবং তার ফটোকপি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ছবি জমা দেওয়া পাশাপাশি তার ফিংগার প্রিন্টও গ্রহণ করে ভিসা কর্তৃপক্ষ। সুতরাং সেখানে ইউটিলিটি বিল এর প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু? পূর্বে একজন ব্যক্তি কয়েকবার পাসপোর্ট নবায়ন করলেও শুধুমাত্র পূর্ববর্তী পাসপোর্টটি সংযুক্ত থাকলেই চলতো বর্তমানে একজন ব্যক্তি বিগত দিনে যতগুলো পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে তার সবগুলো সংযুক্ত করতে হচ্ছে অথবা পাসপোর্টগুলো হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে তার প্রত্যায়ন হিসেবে থানার একটি জিডি কপি সংযুক্ত করতে হচ্ছে।

আগে একজন চিকিৎসা প্রত্যাশী ব্যক্তি ভারতে যে কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতো কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি নির্ধারিত হাসপাতালেই আপনাকে প্রথমেই চিকিৎসা নিতে হবে যা আপনি আপনার ভিসার প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করেছেন। বর্তমানে হাসপাতাল পরিবর্তন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশান অফিস (FRRO) এর মাধ্যমে অনুমতি নিতে হবে অন্যথায় ভিসা আইন লঙ্ঘন করায় ভবিষ্যতে তাদের ভিসা পেতে সমস্যা পোহাতে হবে কিন্তু বিষয়টি অনেকেই জানে না, যদিও বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের ওয়েবসাইটেও বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া আছে। আগে কখনো আপনি ভারতে কোথায় ছিলেন সেই বিষয়টি সীমান্তে ইমিগ্রেশন বিভাগ আপনার কাছে জানতে চাইতো না, কিন্তু বর্তমানে অনেক সময় হোটেল অথবা গেস্ট হাউজের বিল ইমিগ্রেশন বিভাগকে উপস্থাপন করতে হচ্ছে বিশেষ করে সড়ক পথে যারা সীমান্ত অতিক্রম করেন। কিন্তু অনেকেরই সেই বিষয়টি জানা না থাকায় তার সেটি সঙ্গে রাখে না ফলে ইমিগ্রেশনে তাদের অনেক হেনস্থার স্বীকার হতে হয়।

সুতরাং ভারতীয় ভিসা সহজীকরণ করা হচ্ছে বলা হলেও প্রকৃত অর্থে দিন দিন নানা শর্ত সংযুক্ত করার কারণে সেটি আরো কঠিন হচ্ছে। তাই নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভিসা প্রাপ্তির শর্তগুলো আরো সহজ করে প্রয়োজনে অন এ্যারাইভাল ভিসা নীতি প্রয়োগ করলে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতবাংলাদেশ এর সম্পর্ক আরো সুন্দর হবে।

লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুরা ইখলাসে তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের সুস্পষ্ট ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা