মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং। এরপর বোলারদের আঁটসাঁট বোলিং। কিন্তু এ সব কিছুই কাজে আসলো না। বিস্ফোরক এক ইনিংসে সব পণ্ড করে দিলেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। যে উইকেটে বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান ভুগলেন, সেখানে ছক্কা বৃষ্টিতে আফগানিস্তানকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল মঙ্গলবার এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের পর সাংবাদিকরা আফগান অধিনায়ককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই জয়টা আফসেট কিনা। জবাবে মোহাম্মদ নবী বলেছিলেন, আফসেট নয় এটা আমাদের প্রচেষ্টার ফসল। পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে আফগানরা জানিয়ে দিলেন তারা আফসেট ঘটাতে নয় বরং এশিয়া কাপ জিততে এসেছে আরব আমিরাতে। মুজিব আর রশিদের ঘুর্নির পর ইব্রাহিম জাদরান এবং নাজিবুল্লাহ জাদরানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে সবার আগে মোহাম্মদ নবীর দল পৌছে গেল সুপার ফোর পর্বে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে সেটা বোধহয় আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। এই ম্যাচের আগে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছিলেন ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে ব্যাটিং। কিন্তু দেখা গেল ব্যাটিং নয় বরং বোলিংই গড়ে দিয়েছে ব্যবধানটা। বিশেষ করে বলতে গেলে দুই আফগান স্পিনার রশিদ আর মুজিব মিলেই গড়ে দিয়েছেন এই ব্যবধান।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায়। সোহানের জায়গায় দলে সুযোগ পাওয়া নাইম শেখ পারলেন না সুযোগটাকে কাজে লাগাতে। মুজিব উর রহমানের সে ধাক্কা না সামলাতেই চতুর্থ ওভারে এই স্পিনারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন আরেক ওপেনার এনামুল। তিনে নামা সাকিব ভাল কিছু করার ইঙ্গিত দিলেও সেই মুজিবুরের বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরেন। ৯ বলে ১১ রান করা সাকিব দলকে রেখে আসেন ২৪ রানে। মুশফিকও সে পথে পা বাড়ালেন দ্রুত। রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন ১ রান করে। ২৮ রানে চার টপ অর্ডার ব্যাটার ফিরে আসার পর আফিফ এবং মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেন বিপর্যয়ে হাল ধরার। কিন্তু সে আশাও গুড়ে বালি। ২৫ রানের জুটিটা ভাঙ্গেন রশিদ খান। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন আফিফ ১২ রান করে। আফগান স্পিনে কাঁপতে থাকা বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ এবং মোসাদ্দেক কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। যদিও তাদের জুটিটা ৩৩ রানের বেশি হয়নি। রশিদ খানের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ২৭ বলে ২৫ রান করেন সাবেক এই অধিনায়ক। এরপর লড়াই করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তাকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছেন মেহেদী হাসান। দুজনের জুটিটা ৩৮ রানের। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে থামে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক অপরাজিত ছিলেন ৩১ বলে ৪৮ রান করে। আর মেহেদী করেন ১২ বলে ১৪ রান। আফগানিস্তানের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মুজিব উর রহমান এবং রশিদ খান।
জবাব দিতে নামা আফগানিস্তাননকে খুব বেশি সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আঘাত হানেন সাকিব। রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফেরান মুশফিকের স্টাম্পিং বানিয়ে। ১৮ বলে ১১ রান করেন গুরবাজ। আরেক ওপেনার হজরতুল্লাহ জাজাইকে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন। ২৬ বলে ২৩ রান করা গুরবাজ রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেনি এলবিডব্লিউর হাত থেকে। নিজের প্রথম ওভারে মোহাম্মদ নবীকে ফিরিয়ে ভাল একটা চাপ সৃষ্টি করেছিলেন সাইফুদ্দিন। ৬২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে তখন চাপে আফগানরা। কিন্তু কে জানতো সেখানেই শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের বোলারদের সব জারিজুরি। এরপর চাপটাকে উল্টো বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিলেন দুই আফগান ব্যাটার ইব্রাহিম জাদরান এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান। এ দুজন আর কোন সুযোগ দেননি বাংলাদেশের বোলারদের। তারপরও রান রেটের বিচারে এগিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ তম ওভার শেষে আফগানদের দরকার ছিল ২৪ বলে ৪৩ রান। তখনো বেঁচে ছিল বাংলাদেশের আশা। কিন্তু মোস্তাফিজের করা ১৭ তম ওভার এবং সাইফুদ্দিনের করা ১৮ ওভারে সব শেষ করে দেন দুই জাদরান মিলে। মোস্তাফিজ দিয়েছেন ১৭ রান আর সাইফউদ্দিন দিয়েছেন ২২ রান। সেখানেই ম্যাচ শেষ। শেষ পর্যন্ত ৯ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখে শ্যাচ শেষ করে আফগানিস্তান। ইব্রাহিম জাদরান অপরাজিত ছিলেন ৪১ বলে ৪২ রান করে। আর নাজিবুল্লাহ জাদরান অপরাজিত থাকেন ১৭ বলে একটি চার আর ছয়টি ছক্কার সাহায্যে ৪৩ রান করে। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুজিব উর রহমান।