লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ট্রেনের ধাক্কায় গুরতর আহত হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা শুরু হয় আহত অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী হাতিটির। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটি মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক ও গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সচিব হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন। তিনি আজাদীকে বলেন, হাতিটিকে পার্কে আনার আগেই অনেকটাই চলনশক্তিহীন অবস্থায় ছিল। এক পা সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়াসহ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি। যদিও দুর্ঘটনার পর পরই পার্ক থেকে দ্রুত হাতিটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক হাতিটির উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রেরণ করা হয়। মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান মো. ফরহাদ হোসেন আজাদীকে বলেন, হাতিটির ডান পা, পিটে এবং মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়। সেজন্য প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি। মেডিক্যাল বোর্ড অনেক চেষ্টাই করেছিল হাতিটিকে সুস্থ করে তুলতে।
বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী হাতিটির বয়স আনুমানিক ৯ থেকে ১০ বছর। একটি স্ত্রী হাতি ১৪ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ট্রেনের ধাক্কায় হাতিটির পেছনের ডান পা ভেঙে গেছে। এরপর হাতিটি নিচে গড়িয়ে পড়ে। এতে হাতিটির মেরুদণ্ডেও ব্যাপক ইনজুরি তথা ভেঙে যায়। একইসঙ্গে প্রচণ্ড আঘাত লাগে মাথায়ও। হাতিটি স্বাস্থ্যবান হলেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান– একসঙ্গে থাকা ছয়টি হাতির একটি দল গত রবিবার সন্ধ্যা থেকে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে বিচরণ করতে দেখা যায়। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক মাদী হাতিটি দলছুট হয়ে যায়। এরপর এদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম–কঙবাজার রেললাইনে কঙবাজার ছেড়ে আসা ট্রেনটি পেছন থেকে হাতিটিকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় হাতিটি।
জানা যায়, গতকাল ভোর ৪টার দিকে রেলওয়ের একটি রিলিফ ট্রেন আহত বন্যহাতিটি উদ্ধারের জন্য দুর্ঘটনাস্থলে যায়। বনবিভাগের কর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৬টার দিকে হাতিটিকে ট্রেনে তোলা হয়। এরপর আহত হাতিটিকে বহন করে ট্রেন চকরিয়া স্টেশনে পৌঁছে ট্রাকে তুলে হাতিটিকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়।